1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন

ই-জিপি প্রবর্তন সত্ত্বেও দুর্নীতি পেয়েছে টিআইবি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) প্রবর্তন সত্ত্বেও নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি জানায়, ই-জিপি প্রবর্তনের ফলে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। টেন্ডার বাক্স ছিনতাই, টেন্ডার সাবমিট করতে না দেয়া, কার্যালয় ঘেরাও বন্ধ হলেও দুর্নীতি কমার সঙ্গে ই-জিপির তেমন সম্পর্ক নেই বলে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই মত প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন : বাংলাদেশে ই-জিপির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরেছে টিআইবি।
গবেষণার উদ্দেশ্য হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্রয় আইন ও বিধি অনুযায়ী ই-জিপি কতটুকু অনুসরণ করা হয় তা চিহ্নিত করা, ই-জিপি যথাযথভাবে অনুসরণ না হলে তার কারণ অনুসন্ধান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ই-জিপির কার্যকারিতা পর্যালোচনা এবং ই-জিপি প্রয়োগে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের উপায় সুপারিশ করা।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ই-জিপি চালু হলেও রাজনৈতিকভাবে কাজের নিয়ন্ত্রণ ও ঠিকাদারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় কোনো বিশেষ কাজে কারা টেন্ডার সাবমিট করবে সেটা রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঠিক করে দেন। অনেক ক্ষেত্রে একটি বড় লাইসেন্সের অধীনে কাজ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা তার কর্মীদের মাঝে বণ্টন করেন।
দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, নিজেরা কাজ না করে কম্পিউটার অপারেটরদের মাধ্যমে মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি, নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে আনুকূল্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অফিস কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের রেট শিডিউল জানিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অফিসের কম্পিউটার অপারেটরদের সাহায্যে নিয়মবহির্ভূত কাজ করানো হয়।
লিমিটেড টেন্ডার মেথডে (এলটিএম) কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া কাজ তদারকি, অগ্রগতি প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেয়া, কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিল তুলতে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
ওপেন টেন্ডার মেথডে (ওটিএম) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে থেকেই সিন্ডিকেট করা থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় ঠিকাদার, রাজনৈতিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া অবৈধভাবে কাজ বিক্রি করা বা সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়া এবং একজনের সার্টিফিকেট ও লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ নেয়া ও অন্য জনের কাজ করা হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দেয়া বা দিতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরের ঠিকাদারদের কাজ করতে না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
ই-জিপি পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ হওয়ার কারণে ভালো ও দক্ষ ঠিকাদারদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে কাজ বাস্তবায়নে দুর্নীতি কমসহ কাজের মান ভালো হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের অধিকাংশের মতে, ই-জিপির সঙ্গে কাজের মানের সম্পর্ক নেই। তথ্যদাতাদের মতে, ই-জিপির কারণে কাজ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কাজ বিক্রি করার কারণে তা নষ্ট হচ্ছে।
টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎ (আরইবি) (৪৪ শতাংশ), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) (৪৩ শতাংশ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) (৪২ শতাংশ)। প্রাপ্ত সার্বিক স্কোর অনুসারে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই ‘ভালো নয়’ গ্রেডে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাপ্ত স্কোর থেকে দেখা যায়, সবগুলো প্রতিষ্ঠানই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে মোটামুটি ভালো ও প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে (৬০-৭৫ শতাংশ), তবে সওজ ও আরইবির সক্ষমতা অন্য দুই প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুলনামূলক ভালো। ই-জিপি প্রক্রিয়া মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি অবস্থানে (৫৮-৬৪ শতাংশ) রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখনো অনেক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। ই-জিপি ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকারিতায় কোনো প্রতিষ্ঠানই কোনো স্কোর পায়নি বলে দেখা যায়। আবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের স্কোর অনেক কম (১৯-৩০ শতাংশ)।
এসব উত্তরণে একডজন সুপারিশ করেছে টিআইবি।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা
১. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয় ই-জিপির মাধ্যমে করতে হবে।
২. ই-জিপি পরিচালনায় কাজের চাপ ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে জনবল বাড়াতে হবে।
৩. ই-জিপির সঙ্গে সম্পর্কিত সব অংশীজনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্রতি জেলায় সিপিটিইউর তত্ত্বাবধায়নে একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর পর ঠিকাদার, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৪. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) প্রত্যেক অর্থবছরের শুরুতে তৈরি ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
ই-জিপি প্রক্রিয়া
৫. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে প্রাক-দরপত্র মিটিং নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ঠিকাদারদের একটি অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে যেখানে সব ঠিকাদারের কাজের অভিজ্ঞতাসহ হালনাগাদ তথ্য থাকবে। কাজের ওপর ভিত্তি করে ঠিকাদারদের আলাদা শ্রেণি বিন্যাস করতে হবে যা সঠিক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
৭. সিপিটিইউর পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত স্বয়ংক্রিয় দরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকতে হবে যা সব সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করবে।
ই-জিপি ব্যবস্থাপনা
৮. সিপিটিইউর পক্ষ থেকে ই-চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও কার্যাদেশ বাস্তবায়ন তদারকি ই-জিপির অধীনে শুরু করতে হবে।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকরতা
৯. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে ই-জিপি গাইডলাইন অনুযায়ী নিরীক্ষা করাতে হবে।
১০. দরপত্র সংক্রান্ত সব তথ্য ও সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের জন্য স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
১১. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ই-জিপির সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজস্ব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ও সম্পদের বিবরণী প্রতিবছর শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে ও তা প্রকাশ করতে হবে।
১২. প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি এবং এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এ জন্য স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে তদারকির (কমিউনিটি মনিটরিং) চর্চা শুরু করা যেতে পারে। একইভাবে প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য নিয়মিতভাবে গণশুনানি আয়োজন করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি