1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

মাটিচাপায় মৃত্যু বিদেশের বদলে না ফেরার দেশে জুলহাস বিয়ের দুই দিন আগে দাফন হলো অন্তরের,

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

ছেলে অন্তর শেখকে হারিয়ে কিছুতেই কান্না থামছে না ঝর্না বেগমের। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের উত্তর কবিরপুর গ্রাম

আফজাল শেখ-ঝর্ণা বেগম দম্পতির তিন ছেলে। বছর সাতেক আগে প্রতিবন্ধী বড় ছেলে জীবন ১৭ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যান। এবার সেতু নির্মাণকাজে গিয়ে মাটিচাপায় মারা গেলেন তাঁদের মেজ ছেলে অন্তর শেখ (২৩)। অথচ আজ বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ শেষে আগামীকাল শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল অন্তরের।

অন্তরদের বাড়ি ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের উত্তর কবিরপুর গ্রামে। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে এক শোকাতুর পরিবেশ। যে ছেলেটি পরিবারের প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন তাঁকে হারিয়ে অকুলপাথারে পড়েছে বাবা আফজাল শেখ ও মা ঝর্ণা বেগম। প্রতিবেশিরা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু সান্ত্বনার কথা মা ও বাবার চোখের পানি থামাতে পারছে না। মা শুয়ে শুয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন। পাগলপ্রায় বাবা কখনো হাঁটছেন, কখনো বসছেন।

গতকাল বুধবার ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার জমাদার ডাঙ্গী এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করার সময় স্তূপ করে রাখা মাটিতে চাপা পড়ে তিন শ্রমিক নিহত হন। তাঁরা হলেন—ফরিদপুর সদর উপজেলার কবিরপুর গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে অন্তর শেখ (২২), কুজুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল মীরের ছেলে জুলহাস মীর (২০) ও বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর উত্তরকান্দি গ্রামের আল আমিন খাঁর ছেলে জাবেদ খাঁ (২৩)। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করে স্বচ্ছলতা আনার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল জুলহাস মীরের।

খালের পাশে স্তূপ করে রাখা মাটি এবং খালপাড়ের মাটি ধসে পড়লে সাত শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়ে। গতকাল ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার জমাদার ডাঙ্গী এলাকায়

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তর শেখের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আগামীকাল। কনে চাচাতো বোন। গতকাল বিকেলে অন্তরের বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর সেদিন রাতে ফিরেছেন লাশ হয়ে। আজ বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সবার অলক্ষে এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অঝোরে চোখের জল ফেলছেন কনে। মুখে কোনো কথা নেই।

আফজাল শেখ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে দুই দফা তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন দিনে এক-দুই ঘণ্টার বেশি রিকশা চালাতে পারেন না। শ্রমিকের কাজ করে সংসারের খরচ অন্তরই চালাতেন। হতদরিদ্র এই পরিবারে সম্বল বলতে চার শতক জমির ওপর একটি টিনের ছাপরা। এই ঘরেই দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন আফজাল। পাশে পাটখড়ির বেড়া দিয়ে করা রান্নাঘর।

ছেলে হারানোর শোকে কাঁতর জোলেখা বেগম। আজ সকালে ফরিদপুর সদরের কুজুরদিয়া গ্রামে

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন মাটিচাপায় শেষ

কুজুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল মীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ছেলে জুলহাসকে হারানোর শোকে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন মা জোলেখা বেগম। আহাজারি করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘আমার বাবারে আমার সোনারে কোথায় গেলি রে। আয় আমার সোনা তো বিদেশ যাওয়ার কথা।’ একটু বিরতি দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ওরে আমার কি সর্বনাশ হইয়া গেল রে, আমার সব শেষ হইয়া গেল।’ তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা।

প্রতিবেশীরা জানান, জুলহাসের মালয়েশিয়া যাওয়া ঠিক ঠাক হয়ে গিয়েছিল। কাটা হয়েছিল বিমানের টিকিটও। আগামী বুধবার (৭ জুন) তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। বাবা ইসমাইল মীর সুদে সাড়ে চার লাখ টাকা এনে খরচ করেছিলেন জুলহাসের বিদেশে যাওয়ার জন্য। স্বপ্ন ছিল ছেলে বিদেশে গেলে সংসারের মোড় ঘুরবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে পরিবারটি।

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে নির্মাণাধীন সেতুর পাইলিংয়ের মাটি ধসে ৩ শ্রমিকের মৃত্য

 

জুলহাসের ফুফু মলিনা বেগম জানান, আট দিন আগে কাজে যায় জুলহাস। বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য গতকাল বিকেলে তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। তিনি বলেন, গতকাল রাতে বাড়ি ঠিকই এল জুলহাস, কিন্তু জীবন নিয়ে ফিরতে পারল না, ফিরল লাশ হয়ে।

ইসমাইল মীর কৃষিকাজের পাশাপাশি রিকশা–ভ্যান চালান। ৯ শতাংশ জমির ওপর তাঁর বাড়ি। চাষের জমি আছে আট শতক। সকালে একটি ঘরে বসে কাঁদছিলেন ইসমাইল মীর। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন স্বজনেরা। ইসমাইল মীর বলেন, ‘আমি মামলা করব ক্যা। ছেলে তো আর কেউ ফিরায় দিতে পারবে না।’

মামলা না করায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই অন্তর ও জুলহাসের মৃতদেহ তাঁদের হাতে তুলে দেয় সদরপুর থানা। এলাকাবাসী গতকাল রাত আটটার দিকে নিজ নিজ গ্রামে তাঁদের মরদেহ নিয়ে চলে আসেন। রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে দুজনের মৃতদেহ দাফন করা হয়। কবিরপুর মধ্যপাড়া টাওয়ার মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে অন্তরের দাফন হয় কবিরপুর কবরস্তানে। জুলহাসের জানাজা হয় শোলকুণ্ডা মাদ্রাসা মাঠে, দাফন হয় ফুসরা কবরস্থানে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি