অনলাইনে পণ্য বেচাকেনায় মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রেখে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নির্দেশিকায় মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবার তথ্য প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়, সাধারণ নিয়মাবলী, মার্কেটপ্লেসে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন, পণ্য ডেলিভারী, অগ্রিম পরিশোধিত মূল্য সমন্বয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যা গ্রাহকদের জন্য সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে গেজেট আকারে প্রকাশিত নির্দেশিকাটি পড়ে শোনান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, ডিজিটাল বেচাকেনায় স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা আনতে ৬৯টি ধারার ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা’ জারি করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসার যাতে সুষ্ঠু বিকাশ হয় এবং তাদের প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে, একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিরাজ করে, সেজন্য সব পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই নির্দেশিকা প্রণয়ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ডিজিটাল কমার্সের আওতায় নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোন নিষিদ্ধ সামগ্রী বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। জুয়া বা অনলাইন বিটিং বা অনলাইন গেমবলিং এর আয়োজন বা অংশগ্রহণ করা যাবে না। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্টানসমূহ সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিত কোন ধরণের লটারি’র আয়োজন করতে পারবে না। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসায় পরিচালনা করা যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ঘোষিত নীতিমালার আলোকে প্রণীত নির্দেশিকা সঠিকভাবে কার্যকরের মাধ্যমে বিকাশমান ই-কমার্স খাতকে টেকসই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আমরা একটা শুরু করলাম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই নির্দেশিকায় আরও নতুন কিছু সংযোজন করা হবে।’
ই-কমার্স নির্দেশিকার উল্লেখযোগ্য ধারা
পণ্য বিপণনের শর্তগুলো পণ্যের পাশে বাংলা ভাষায় স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে। বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষায়ও লেখা যাবে। প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না।
ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপণন করা পণ্যের সব বিবরণ ও শর্ত উল্লেখ থাকতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে ‘এমএলএম’ পরিচালনা করা যাবে না। ‘জুয়া’ বা ‘অনলাইন বেটিংয়ের’ আয়োজন করা যাবে না।
ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। দাহ্য পদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে লাগবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স। বিক্রেতার ওয়েবসাইটে বিশেষ সফটওয়্যার বা কুকিজ থাকলে আগেই ক্রেতাকে জানাতে হবে।
গ্রাহকের কোনো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে হলে সেজন্য আগেই তার সম্মতি নিতে হবে। ‘লটারি’ বা ‘র্যাফেল ড্র’ করতে হলে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে।
সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, সেসব বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া করা যাবে না। ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবা কিনতে বাধ্য করা যাবে না।
ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, টিআইএন, ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্টের কোনো একটি গ্রহণ করতে হবে এবং তা ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শন করতে হবে।
লেনদেনের সব তথ্য অন্তত ছয় বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট মার্কেট প্লেসে পণ্য বিক্রয় করার পর দাম বুঝে পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে বিক্রেতাকে তা দিয়ে দিতে হবে।
মার্কেট প্লেসকে বিক্রেতাদের নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
দেশের ভেতরে অবস্থান করছে এমন পণ্যের জন্যই কেবল অগ্রিম মূল্য নেওয়া যাবে। মূল্য গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হস্তান্তর করা না গেলে ১০ শতাংশের বেশি মূল্য নেওয়া যাবে না। এর বেশি মূল্য নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘এসক্রো সার্ভিসের’ মাধ্যমে নিতে হবে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভোক্তার অভিযোগের সমাধান করতে একজন ‘কম্প্লায়েন্স অফিসার’ নিয়োগ দিতে হবে। তিনি ভোক্তার অভিযোগ নিয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবেন। অভিযোগপ্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সমাধান করে ফোন, ইমেইল অথবা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।
ক্রয়াদেশ গ্রহণ করার পর পণ্য বা সেবা দিতে না পারলে অর্ডারের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ক্রেতাকে জানাতে হবে। আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে।