করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষ ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লেনদেন করার পরিবর্তে ফিনটেক ভিত্তিক লেনদেনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। ফলে টানা চতুর্থ মাস ফেব্রুয়ারিতেও অনলাইন ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৭৭ কোটি তিন লাখ টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। ওই মাসে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় আট হাজার ১৮৮ কোটি নয় লাখ টাকা। তার আগের মাস অক্টোবরে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ২৮৬ কোটি সাত লাখ টাকা।
গেলো বছরের ডিসেম্বরে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় আট হাজার ৯২ কোটি ছয় লাখ টাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে আট হাজার ৫৪৩ কোটি চার লাখ টাকা। ব্যাংকাররা বলেন, সাম্প্রতিককালে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হলেও মহামারি করোনার কারণে তা আরও অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছে।
তারা আরও বলেন, ২০২০ সালের মার্চে করোনার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি ব্যাংকে লেনদেনের জন্য শাখায় যাওয়া কমানোর চেষ্টা করেছেন। নিরাপদে ঘরে বসে করোনার ঝুঁকি এড়িয়ে গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব বাড়ায় গ্রাহকও বাড়ছে। ১৪ মাসের ব্যবধানে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৯ দশমিক ১ লাখ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৮২ শতাংশে। ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন ব্যাংকের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে লগইন করে বা স্মার্টফোনে অ্যাপস ইনস্টল করে যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় লেনদেন করতে পারছেন।
ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউলিটি বিল, ক্রেডিট কার্ডের বিল, আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তর, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট কার্ড থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা আনা ও অ্যাকাউন্ট খোলার মতো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুধু গ্রাহকদের জন্য স্বস্তি আনেনি। ভবিষ্যতে শাখায় গ্রাহকের উপস্থিতি কমে গেলে শারীরিক অবকাঠামো হ্রাস করার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে সহায়তা করবে। গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেনের মূল্য বাড়া ছাড়াও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাসে লেনদেনের পরিমাণ ১৪ মাসের ব্যবধানে ৩৮ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৮ লাখ বেড়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৫২ লাখ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৮০ লাখে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের প্রবণতা বাড়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তঃব্যাংক প্রতিদিন অনলাইন লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে। যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারকারীদের সীমা পাঁচ গুন বাড়ানো হয়েছে।
ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন ১০টি লেনদেনের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থানান্তর করা যায়। একক লেনদেনে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থানান্তর করা যায় সর্বোচ্চ ২০টি লেনদেনে। একক লেনদেন করা যায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।
এর আগে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য আলাদা কোনো লেনদেন সীমা ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি হিসেবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তর করা যেত। উভয় ধরনের হিসেবে দিনে পাঁচটি লেনদেনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত স্থানান্তর করা যেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তর বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।