আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। আজ (বৃহস্পতিবার) এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবেগতাড়িত হয়ে এ ঘোষণা দেন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক।
দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটেই নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছান তামিম। শুরু থেকেই দেখা যায় তাঁর চোখ ভেজা। মিনিট দশেক পর কথা শুরু করেই তামিম জানান, গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটিই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তামিম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’
তামিম শুরুতেই বলেন, ‘নরম্যালি এমন সময়ে যেকোনো মানুষই স্পিচ লিখে নিয়ে আসে, কিন্তু এমন কিছু আমি করিনি। খুব বেশি বড় করবনা, ছোট করেই শেষ করবো আমার কথা।’
এখনই সরে দাঁড়ানোর সঠিক সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।’
১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।’
নিজের বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্যই ক্রিকেট খেলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’ এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেই ছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। শতভাগ ফিট না হয়েই এই ম্যাচে খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তামিম। গতকাল সে ম্যাচে তিনি খেলেছেনও যাতে বৃষ্টি আইনে হেরেছে বাংলাদেশ। পুরোপুরি ফিট না থাকায় ব্যাট হাতে মাত্র ১৩ রান করেই আউট হয়েছেন তিনি। এদিকে অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিসিবি সভাপতি এবং কোচ। এসব নিয়েই দেশসেরা ওপেনারের আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। এর মাঝে গতকাল রাতেই টাইগার অধিনায়ক জানিয়েছিলেন আজ দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কান্নাভেজা চোখে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলাকে বিদায় জানালেন তিনি।
একনজরে তামিমের ক্যারিয়ার
#২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১৪টি ও ফিফটি ৫৬টি।
# টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম।
# টি–টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি।