অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদেরা বর্ণমালা ব্যবহার করে থাকেন। এটা দিয়ে তাঁরা মূলত গ্রাফের মাধ্যমে বোঝাতে চান, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কীভাবে সংঘটিত হবে। অনেক দিন ধরেই এই চর্চা চলে আসছে—ইউ, ভি বা ডব্লিউ আকৃতির পুনরুদ্ধার। তবে এবার এর সঙ্গে নতুন আরেকটি বর্ণ যোগ হয়েছে। সেটা হলো, ইংরেজি বর্ণমালার কে আকৃতির পুনরুদ্ধার।
তবে অন্যান্য আকৃতির পুনরুদ্ধারের সঙ্গে কে আকৃতির পুনরুদ্ধারের একটা পার্থক্য আছে। ইউ, ভি বা ডব্লিউ আকৃতির পুনরুদ্ধারের চেয়ে কে আকৃতির পুনরুদ্ধার কিছুটা ভিন্ন। এই আকৃতির পুনরুদ্ধার অতটা সরল নয়। এ ক্ষেত্রে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা অসম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এ ক্ষেত্রে ধনীরা উপকৃত হলেও অন্যরা বাদ পড়ে যায়।
কে আকৃতির পুনরুদ্ধারের বৈশিষ্ট্য হলো, এতে অর্থনীতির নির্দিষ্ট কিছু খাত ঘুরে দাঁড়ালেও অন্যান্য খাত পিছিয়ে থাকে। অর্থাৎ কে বর্ণের যেমন দুটি বিপরীতমুখী রেখা দেখা যায়, এই আকৃতির পুনরুদ্ধারেও তেমনটা দেখা যায়।
ব্যাপারটা প্রকৃত অর্থেই অস্বাভাবিক। সাধারণত, অর্থনৈতিক মন্দার সময় সব খাত ও জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এর প্রভাব দেখা যায়। এরপর পুনরুদ্ধারের সময়ও একই ধারা দেখা যায়। এটা ঠিক, কখনো কোনো খাত বেশি আক্রান্ত হয় বা তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়ায়, তবে সামগ্রিকভাবে একধরনের সমতা দেখা যায়।
এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধারের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিভিন্ন খাত একেক সময় একেকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু মহামারির কারণে এখন এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, এতে অর্থনীতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। যারা ভালো করছে এবং যারা ভালো করছে না, তাদের মধ্যকার পার্থক্য কেবল বেড়েই যায়। পরিণামে সমাজে বিদ্যমান অসমতা বা সমস্যা আরও খারাপ হয়।
এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধারের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিভিন্ন খাত একেক সময় একেকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু মহামারির কারণে এখন এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মহামারিজনিত এই মন্দা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে অসম প্রকৃতির হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সে কারণে এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া মোটেও বিস্ময়কর কিছু নয়।
কোভিড-১৯ অর্থনীতিকে স্পষ্টত বিভক্ত করে ফেলেছে। সে কারণেই এই কে আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া হালে পানি পাচ্ছে। নানাভাবে এই বিভক্তিকে চিহ্নিত করা যায়—কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ হারাননি, কেউ উঠতি শিল্পে কাজ করছেন, কেউ পড়তি ইত্যাদি।
পিউ রিসার্চের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রেণি, প্রজন্ম ও বর্ণভিত্তিক বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের পরিবার, তরুণ, কালো ও হিস্পানিক মার্কিনরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া উচ্চ ও নিম্ন বেতনের কর্মীদের মধ্যেও বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের চেয়ে এমনিতেই পিছিয়ে থাকেন। মহামারিতে সেই বিভাজন আরও বড় হয়েছে। সব মিলিয়ে কে আকৃতির পুনরুদ্ধার এই অসমতার জন্ম দেয়নি, বরং তা দেখিয়ে দিয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে ব্যবধান আরও বাড়বে।