অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্টের ছেলে ও তার সাবেক স্ত্রীকে। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় মাদক পাচারকারীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ নেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে।
কলম্বিয়ার চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, শনিবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৬টার দিকে বোগোটার একটি আদালতের নির্দেশে নিকোলাস পেত্রো ও তার সাবেক স্ত্রী ডেসুরিস ভাজকেজকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা হলে অস্থায়ী আটকাদেশ চাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, তিনি বা তার সরকার এই তদন্তে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রেসিডেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, একজন পিতা হিসেবে ছেলেকে জেলে যেতে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি প্রধান প্রসিকিউটর অফিসকে আশ্বস্ত করেছি, তারা আইন অনুসারে এগিয়ে যাওয়ার গ্যারান্টি পাবে।
গুস্তাভো বলেছেন, তিনি তার ছেলের জন্য ‘সৌভাগ্য ও শক্তি’ কামনা করছেন। এই ঘটনাগুলো যেন তার চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে এবং সে তার নিজের ভুলত্রুটিগুলো সম্পর্কে চিন্তা করে।
প্রেসিডেন্টপুত্রের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে গুস্তাভো সরকারের ওপর বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যদিও গত মার্চ মাসে তদন্ত শুরু হলে নিকোলাস পেত্রো নিজেই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং তার বাবার শান্তিপ্রচেষ্টায় অন্তর্ভুক্ত করার বিনিময়ে মাদক পাচারকারীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছিলেন।
তবে জুনিয়র পেত্রোর সাবেক স্ত্রী ভাজকুয়েজ এ বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় মিডিয়ার সামনে অভিযোগ করেন, মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি নিকোলাসকে তার বাবার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন।
অর্থপাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নিকোলাস পেত্রোকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটররা। ভাসকেজের বিরুদ্ধেও কিছু অতীত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে দেশটির কোনো শক্তিশালী মাদক পাচারকারী গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তার দাবি, তিনি নিজেই ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলেছেন।
কলম্বিয়ার ইতিহাসে প্রথম বামপন্থি নেতা হিসেবে ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ৬৩ বছর বয়সী গুস্তাভো পেত্রো। তিনি ছিলেন এম-১৯ গেরিলা বাহিনীর সদস্য, যেটি মূলত কলম্বিয়ার ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির বিরোধিতা করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পেত্রো মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেই বাহিনীতে যোগ দেন। এর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকতে হয়েছিল তাকে।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন পেত্রো। দেশটিতে ছয় দশক ধরে চলে আসা অভ্যন্তরীণ সংঘাত সমাধানে অপরাধী গ্রুপগুলোকে অস্ত্র জমা দিয়ে শান্তিচুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
খবর আল-জাজিরা