আব্দুল হাছিব সিলেট: নিজের জামাতাকে সরল বিশ্বাসে সহায় সম্পদ দেখাশুনার ভার দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বৃটিশ নাগরিক কমিউনিটি নেতা ও আওয়ামী পরিবারের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী আফসার। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, সমাজ হিতৈষী মোহাম্মদ আলী আফসার দক্ষিণ সুরমার চান্দাই পশ্চিম পাড়ার মৃত আব্দুর রইছের ছেলে।
রোববার (২৬ মে) দুপুরে সিলেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরই আপন জামাতা দোয়ারাবাজারের দোহালিয়া গ্রামের দেওয়ান তানভীর আলম আশরাফির বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা, অর্ধকোটি টাকার সম্পদ আত্মসাত সহ তাকে তানভীরের দেওয়া প্রাণ- ণাশের হুমকির বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আফসার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “আমি আমার নাড়ীর টানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে বার বার ছুটে আসি। মানুষের কল্যাণে কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। নিজের দেশে বিভিন্ন খ্যাতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হওয়ারও চেষ্টা করি। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে আমার স্থাবর অস্থাবর অনেক সম্পদ রয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমার জামাতা দেওয়ান তানভীর আল আশরাফি আমরাই সাহায্য সহযোগিতায় টাকা পয়সা উপার্জন করে উল্টো প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে অর্জিত আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয় তানভীরের কাছে আমার পাওনা চাইতে গিয়ে প্রাণণাশের হুমকি সহ মারাত্মক অপমানিত ও লাঞ্চিত হয়েছি। আমি তানভীরকে মেয়ের জামাই হিসেবে আমার রক্তঘামে অর্জিত স্থাবর অস্থাবর অনেক সম্পত্তি দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব দেই। আমার উদ্দেশ্য ছিল আমার সম্পদগুলো তত্বাবধান করে আমার মেয়ের জামাই যেন লাভবান হন।
কিন্তু সম্পদের লোভ সামলাতে পারেনি তানভীর। আমি ¯^প্নেও ভাবিনি একদিন এই তানভীর আমার শত্রæ হয়ে সাপের মতো ছোবল মারবে। আমার দেশের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কৌশলে আমার মেয়েকে বশিভূত ও ভুলবুঝিয়ে জালিয়াতি আর বিশ^াসঘাতকতার মাধ্যমে আমার আমানত ছিনিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া নিজের দেশে এসে এমন নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থলোভী জামাতার কাছে অপমানিত হতে হবে তা জীবনে কখনো ভাবিনি।
তানভীর বিশ্বাসঘাতকতা করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রতিনিয়ত ফেসবুক, মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য মাধ্যমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে যাচ্ছে। মিথ্যা ও অশ্লিল মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে পাওয়া মাত্র প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমার সকল সম্পদ আত্মসাৎ করতে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ আমি এবং আমার স্ত্রী বিরুদ্ধে সাজানো
মামলা দিয়ে জেল খাটানোরও হুমকি দিচ্ছে। তার উদ্দেশ্য যে কোন কৌশলে অথবা আমাকে হত্যা করে হলেও সে আমার সহায় সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে চায়। আমি শশুর হিসেবে আমার মেয়ের জীবনের কথা চিন্তা করে তানভীরের এসব অমানবিক কর্মকান্ড সহ্য করে যাচ্ছিলাম। কিন্ত আজ আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দেওয়ান তানভীর আল আশরাফি আমার একটি টয়োটা প্রাইভেট কার যার রেজি নং- ঢাকা মেট্রো গ ৩৭-৮৪৪৩ যার মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। তাছাড়া ৪ লাখ টাকা দামের একটি সিএনজি অটোরিকশা, বাসা-বাড়ী ভাড়া বাবদ ১৪ লাখ টাকা, গাড়ির ভাড়া বাবদ ২ লাখ টাকা ও হাওলাদ বাবদ ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদ সে বিশ^াসঘাতকতার মাধ্যমে আত্মাসাৎ করে। শুধু তাই নয় সুযোগ পেয়ে আমার ফ্লাট বাড়িতে রেখে যাওয়া আমার মূল্যবান ফার্নিচার ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি কু-উদ্দেশ্যে আত্মসাৎ করেছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমি তানভীরের কাছে আমার পাওনা ফেরত চাইলে সে প্রথমে পাওনাগুলো মিটিয়ে দেবে বলে আমাকে কথা দেয়।
কিন্তু পরবর্তীতে তার আসল রূপ আমার কাছে ধরা পড়ে। উন্মোচিত হয়ে যায় তার মুখোশ। এখন আমার পাওনা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো আমাকে দেশে আসলে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তানভীর তার নামে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। তার নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা সম্পাদন করার জন্যও আমাকে নির্লজ্জভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার প্রাণের নিরাপত্তা ও আমার সহায় সম্পত্তির উদ্ধার সহ ন্যায় বিচারের আশায় প্রাবসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন, এসএমপি কমিশনার ও বিমানবন্দর থানায় উক্ত তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেছি। যার অনুলিপি সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে প্রেরণ করেছি। অপরদিকে ইন দা ফ্যামেলি কোর্ট সাইটিং এট ইস্ট লন্ডনে অপর একটি অভিযোগের রায় আমার পক্ষে আসে। রায়ে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে আমার মালিকানাধীন ৭১ ডিসিমেল জমি আমার বলে প্রমাণিত হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশের সমুদয় সম্পত্তি আমার মালিকানাধীন বলে রায় দেওয়া হয়। এ অবস্থায় তানভীরের জুলুম অত্যাচার ও প্রাণনাশের হুমকিতে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দেশে বসবাস করছি। একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান করছি। আমার অপরাধ হলো আমি আমার জামাতাকে একজন ভালো মানুষ মনে করে সরল বিশ^াসে আমার সহায় সম্পদ দেখাশুনার ভার দিয়েছিলাম। আজ এই ভুলের মাশুল আমাকে দিতে হচ্ছে।
আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ হয়েও আমার স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারছি না। সম্পত্তির লোভে জামাতার জগন্য আচরণ ও নিষ্ঠুরতায় আমি হতবাক হয়ে গেছি। আমি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি। কেননা আমরা প্রবাসীরা বিশ^াসের উপর ভর করে দেশের সহায় সম্পদ রেখে বিদেশে যাই। কিন্তু যখন নিজের ভিটে মাটিতে আসি তখন মানুষের প্রতারণা ও দূর্নীতি দেখে বিস্মিত হয়ে যাই।
পরিশেষে আমার কষ্টার্জিত অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ যাতে ফিরে পাই সে লক্ষ আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”