1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমতি দিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অনুরোধ করেছে সরকার।

ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে বীজ থেকে তা উৎপাদনের প্রযুক্তি অথবা আমদানি করে প্যাকেজিং করার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহের কথা উল্লেখ করে ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত বৃহস্পতিবার  বলেন, ‘আমরা অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে ১০ দিন আগে একটি চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি আমাদেরকে তাদের প্রযুক্তি দিতে, যাতে আমরা স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে বীজ অথবা বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনের সরবরাহ চেয়েছে। যাতে কম খরচ ও বহুল ব্যবহৃত এই ভ্যাকসিনটি উৎপাদন অথবা বোতল-জাত করা যায়।’

ভাইরাসের বীজ ও হোস্ট সেল ব্যাংক ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।

বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সামর্থ্য রয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের সে সক্ষমতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সেসব প্রতিষ্ঠানের কিছু প্ল্যান্ট দেখে এসেছি। ভ্যাকসিন উৎপাদনে তাদের সক্ষমতা রয়েছে।’

গতকাল যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে এখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বায়োএনটেক-ফাইজার ও মডার্না ভ্যাকসিনের মতো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনকে অনেক কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার দরকার হয় না। ভ্যাকসিনটিকে সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় (দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস) অন্তত ছয় মাসের জন্য সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কম দামে করোনার টিকা সরবরাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক কোভ্যাক্স উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও বায়োএনটেক-ফাইজার।

বিশেষজ্ঞরা এটিকে সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ বলে প্রশংসা করেছেন। তারা আরও বলেছেন, সরকারের উচিৎ নতুন প্রযুক্তি বা অবকাঠামোর মাধ্যমে তৈরি অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোর উদ্ভাবকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান গতকাল বলেন, ‘বীজ থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের যেটা দরকার তা হলো যথাযথ প্রযুক্তি। কারণ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে তৈরি করা বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই তুলনামূলকভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, উদ্ভাবকদের কাছ থেকে যথাযথ প্রযুক্তি সহায়তা পেলে এই বীজের সঙ্গে অ্যাডজুভেন্ট, স্ট্যাবিলাইজার ও প্রিজারভেটিভ যোগ করে ভ্যাকসিন তৈরি করা আমাদের দেশীয় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারকদের জন্য খুব একটা কঠিন হবে না।’

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশকে যদি বীজ থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হয়, তাহলে বৈশ্বিক মানের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। যার জন্য প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। সঙ্গে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদকেও কাজে লাগাতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ মহামারি-বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে তাদের বায়োলজিক্যাল গবেষণাগারটিকে আরও উন্নত করতে হবে।

গবেষণাগার পরিদর্শনের পর ডব্লিউএইচও ক্যাটাগরি সংক্রান্ত সনদ দিয়ে থাকে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গবেষণাগারটি “এ” ক্যাটাগরিতে পড়েনি। “সি” থেকে এর মান “এ”তে উন্নীত করতে হবে।’

বাংলাদেশ থেকে ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবশ্যই এ সনদটি সংগ্রহ করতে হবে।

সম্প্রতি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বায়োলজিক্যাল গবেষণাগার পরিদর্শন করার জন্য ডব্লিউএইচওকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি বিভাগের সাবেক ডিন আ ব ম ফারুক বলেন, ‘সরকার খুব ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, একইসঙ্গে তাদের উচিৎ হবে স্পুতনিক ফাইভ এর মতো অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা।’

‘যদি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিটি পেয়ে যায়, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো হবে। কারণ আমরা ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষম। আমরা চাইলে বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন এনে এখানে নতুন করে প্যাকেজিংও করতে পারি, যেটি আরেকটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। আমাদের এখানে বিশ্বমানের কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আছে এবং তারা ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষম’, বলেন তিনি।

গত ৫ নভেম্বর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই চালানে সেই চুক্তির ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ভারত থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গত ২১ জানুয়ারি এসেছে। আর গত মাসে বাংলাদেশে সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপহার হিসেবে আরও ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এনেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে একটি ইমেইল পাঠিয়েছে। কিন্তু, এ প্রতিবেদনটি লেখার আগ পর্যন্ত ইমেইলের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

ভ্যাকসিন বিতরণ করার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৫টি দেশে ২০টি অংশীদার আছে এবং সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ২০টি সাইটও রয়েছে তাদের। এ ছাড়াও, তাদের আছে যুক্তরাজ্যে তিনটি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে পাঁচটিরও বেশি (বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি ও স্পেন) ভ্যাকসিন উৎপাদনের কারখানা।

দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদন অংশীদার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার একজন সুইডিশ কর্মকর্তা জানান, সরকার ছাড়াও কিছু বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

তবে, এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি