খাদ্যে ভেজাল এমন একটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে যে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মাছ, চাল, তেল, ঘি, জুস, মসলার গুঁড়া- কীসে নেই ভেজাল! ক্ষতিকর এসব বিষ ক্রমাগত খেতে খেতে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীর চালের দোকানগুলো ভরে গেছে ভেজাল চালে। বাহারি নামে, আকর্ষণীয় বস্তায় যেসব চাল বিক্রি করা হয় তার অধিকাংশই ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রেতাদের কাছ থেকে বাংলা ইনসাইডারের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে ভেজাল চালের বিষয়ে। ক্রেতারা বলছেন , চালের সাথে ভেজাল মেশানো হচ্ছে । আকারের ধরণে প্রায় এক দেখতে মিনিকেট চালের সাথে কাটিং, পালিশ করে মেশানো হচ্ছে আটাশ, স্বর্ণা জাতের চাল। ক্রেতারা বলছেন, চাল বিক্রির পরিবেশনায় দেখানো হচ্ছে এক ধরণের চাল , তবে বস্তার মধ্যে থাকছে মিক্সড চাল। এতো সূক্ষ্মভাবে চাল গুলো প্রসেসড করা হয় যে, ধরার কোনও কায়দা থাকে না, ফলে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা।
বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বলছেন, ক্রেতারা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি চাল পালিশ করা, কৃত্রিম রং মেশানো ভেজাল চালের ভাত খাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। ভেজালের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত মিল মালিকরা। মোটা চাল পালিশ করে বাজারে মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমানে নাজিরশাইলসহ চিকন ও সরু চালের বস্তায় মোটা চাল ভরে নতুন ধরনের প্রতারণা শুরু হয়েছে।
মিল মালিকরা এ ব্যাপারে বলছেন, তারা ভালো মানের চাল বস্তায় ভরে আড়তে দেওয়ার পর অসৎ ব্যবসায়ীরা দ্রুত সেই ব্র্যান্ডের বস্তার ছাপ নকল করে নিম্নমানের চাল আড়তে সরবরাহ করে। সরকার চালের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে মাঠে নামিয়েছে। গত কয়েক দিনে রাজধানীর তিনটি বড় বাজার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে চালের দোকানে ৯২টি অভিযান চালিয়ে তারা ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
দেশে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, মোটা, মাঝারি মোটা বা লম্বা মোটা চালকে কাটিং ও পালিশ করে চিকন/ সরু চালের দামে তা বিক্রি করে ভোক্তা ঠকানো হচ্ছে; যা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩১ ও ৩২ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। খাদ্যে ভেজাল যে অপরাধ তা জেনেও অনেকে এ ধরনের ভেজালের সঙ্গে জড়িত। চালে ভেজালের কারণে ভোক্তা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিম্নমানের চাল ভোক্তার পরিবারে প্রত্যেক সদস্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। চাল ভেজালকারীদের থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।