দেশে গ্যাস সংকট বাড়তে থাকায় এলপিজির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু এর দাম নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণে রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকা নেই। অথচ আইন অনুযায়ী দেশে এলপিজির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার শুধু বিইআরসির। এমন বাস্তবতায় এলপিজির দাম বিইআরসির মাধ্যমে নির্ধারণের জন্য গত বছর আদালতে রিট আবেদন করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আদালতের রায় মেনে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মূল্যহার ঘোষণার নিয়ম রয়েছে। আগামী বুধবার এ সময়সীমার শেষ দিন। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই দিন আগে আগামীকাল এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির নির্ধারিত মূল্যহার ঘোষণা করা হবে। কমিশনের ওয়েবসাইটেও (berc.org.bd) মূল্যহার সংক্রান্ত আদেশ আপলোড করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, মূল্যহার নির্ধারণের সব কাজ গোছানো হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি এবং দলিলাদি তৈরিও সম্পন্ন হয়েছে। এলপিজির দাম নির্ধারণে একটি ফরমুলা তৈরি করা হয়েছে। সেটি অনুসরণ করেই দাম নির্ধারণ ও ঘোষণা করা হবে। জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এলপিজির বাজার আমদানিনির্ভর। এর উপাদান বিউটেন ও প্রোপেন গ্যাস মূলত সৌদি আরামকো থেকে দেশে আমদানি করা হয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজার, বিশেষ করে সৌদি আরামকোর সঙ্গে সমন্বয় করে এর মূল্যহার উঠানামা করা হলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—উভয়পক্ষের জন্যই ন্যায্যতা রক্ষা করা যাবে।
এলপিজি মূলত প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রিত জ্বালানি। সুষ্ঠু, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় তাপমাত্রা অনুযায়ী এলপি গ্যাসে প্রোপেন ও বিউটেনের হার নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু দেশে এ রীতি অনুসরণ করা হয় না। বিইআরসির এ সংক্রান্ত সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো ৩০ থেকে ৫০ ভাগ প্রোপেন এবং সে অনুসারে ৭০ থেকে ৫০ ভাগ বিউটেন মিশিয়ে এলপিজি বাজারজাত করছে। অথচ বাংলাদেশে এলপি গ্যাসে প্রোপেন-বিউটেনের অনুপাত ৩০ থেকে ৪০ এবং ৭০ থেকে ৬০ হওয়া উচিত।
জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এলপিজির মূল্য রাখার জন্য এরই মধ্যে জ্বালানি পণ্যটির ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে ৩ শতাংশ মূসক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূসক কমে ৭ শতাংশে দাঁড়াবে। এর ফলে প্রতি সিলিন্ডার এলপিজির বিদ্যমান দাম কমতে পারে। বর্তমানে ১২ কেজির প্রতিটি এলপিজির সিলিন্ডার ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানিভেদে ও অঞ্চলভেদে এলপিজির দাম বাড়ছে-কমছে।
দেশে বর্তমানে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি ব্যবহূত হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজার টন সরকারি কোম্পানি বাজারজাত করছে। বাকি প্রায় ৯ লাখ ৮৫ হাজার টন আমদানি করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৮টি বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ২০টি এলপিজি আমদানি করছে। এগুলোর বাইরে এলপি গ্যাস লিমিটেড একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলপিজি বিপণন করছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বর্তমানে গড়ে ১ হাজার ১০০ টাকা। আর সাড়ে ১২ কেজির সরকারি এলপি সিলিন্ডারের দাম ৬০০ টাকা। ব্যবহূত এলপিজির ৮৪ শতাংশ যায় রান্নার কাজে। বাকি ১৬ শতাংশ পরিবহনের অটোগ্যাস, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে ব্যবহার করা হয়।