বগুড়ায় শীতকালীন আগাম সবজি (রবি মৌসুমের) চাষাবাদ শুরু করেছেন চাষিরা। এখন সবজি বীজতলায় চারা তৈরি, বিক্রি ও পরিচর্যা করতে ব্যস্ত নার্সারিগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, বীজতলা প্রস্তুতের পর জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল তৈরি করে বীজ রোপণ করা হয়েছে। এরপর বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে ওপর পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বগুড়া সদর উপজেলার মহাস্থান, শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া, মোস্তইল, শাহানগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বীজতলা নিয়ে চাষিদের এমন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে।
চাষিরা কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন বীজতলায়। কাঁচি, কোদাল, পাচুনসহ (স্থানীয় ভাষায়) আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি নিয়ে নেমে পড়ছেন জমিতে। কেউ কেউ প্রস্তুত করা জমিতে রোপণ করছেন বীজ। অনেকেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ব্যস্ত রোপণকৃত বীজতলা পরিচর্যায়।
শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর বাজার এলাকার ফাহিম নার্সারির মো. জাহিদুল ইসলাম, সাদিক নার্সারির মো. আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, বীজতলা প্রস্তুতের পর জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল তৈরি করে বীজ রোপণ করা হয়। পরে বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে ওপর পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, গরম পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এমনটা করা হয়েছে। মাঝে মাঝে ঢেকে দেওয়া পলিথিনগুলো সামান্য উঠিয়ে এক পাশ ফাঁকা করে দেওয়া হয়। যেন বাইরের বাতাস বীজতলায় প্রবেশ করতে পারে। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে প্রথম এক সপ্তাহের মতো এ কার্যক্রম চলে। বীজ গজিয়ে ওঠার পর চাষিরা সেই পলিথিনগুলো সরিয়ে ফেলেন। এরপর বিক্রির আগ পর্যন্ত নিয়মিত চলে পরিচর্যা।
আমিনুল হাসান, হেদায়াতুল ইসলামসহ একাধিক নার্সারি চাষি তিনি জানান, বছরের ছয় মাস নাসারিতে ব্যবসা চলে। শাজাহানপুর উপজেলায় রেজিস্টার ও রেজিস্টারবিহীন কমপক্ষে ৩ শতাধিক সবজি নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারিতে নানান জাতের সবজি বীজ উৎপাদন করা হয়। নার্সারিগুলোতে পুরুষর পাশাপাশি এ কাজ নারীরাও করে থাকেন। বছরের এ সময়টায় সকাল থেকে সারাদিন বীজতলায় ব্যস্ত সময় কাটান চাষিরা। এসব নার্সারিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, গাঁজর, পটোল, শিম, বরবটি, পালং শাক, ঝিঙ্গা, করোলাসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা গাছ পাওয়া যায়।
তারা জানান, বর্তমানে মানভেদে প্রতি এক হাজার পিস ফুলকপির চারা ৯শ’ থেকে ১১শ’, বাঁধাকপির চারা ৮শ’, মরিচের চারা ৬শ’ থেকে ৭শ’, টমেটোর চারা ৯শ’ থেকে ১১শ’, বেগুনের চারা ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বেচা-বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গেল বছর রবি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৪ হাজার ৭শ’ ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ বছরের টার্গেট এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। তবে গেল বছরের তুলনায় কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ বছর ২ হাজার ৮শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চারা লাগানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ও জমি ফাঁকা হওয়া মাত্রই একযোগে চাষাবাদ শুরু করে পূর্ণ লক্ষমাত্রায় নিয়ে যবে চাষিরা।
তিনি জানান, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে এ জেলার চাষিরা মূলত আগস্টের মধ্যবর্তি সময় থেকেই ফাঁকা হওয়া জমিতে চারা লাগানো শুরু করেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বগুড়ার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর, সদর উপজেলায় চাষিরা নার্সারি আকারে নানা জাতের সবজি বীজতলা তৈরি করেছে এবং সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত তারা।