কোহিনূর সুলতানা মিতুঃ
রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল।এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। এটি প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরাতন বলে বিশ্বাস করা হয় কিন্তু ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল ।
জনশ্রুতি, প্রায় ৫০০ বছর আগে বদরীনাথের যোশীমঠ থেকে গোপালগিরি নামে এক উচ্চমার্গের সন্ন্যাসী প্রথমে ঢাকায় এসে সাধন-ভজনের জন্য উপযুক্ত একটি আখড়া গড়ে তোলেন। সেখানেই আরও ২০০ বছর পরে মূল রমনা কালীমন্দিরটি নির্মাণ করেন আর এক বড় সাধু হরিচরণ গিরি। তবে পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরের প্রধান সংস্কারকার্য ভাওয়ালের ভক্তিমতী ও দানশীলা রানি বিলাসমণি দেবীর আমলেই হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ। এই দুটো দিন রমনা কালীমন্দিরের পবিত্র ভূমি ঘিরে পাকিস্তানি সেনারা যে গণহত্যা পরিচালনা করেছিল তা রমনা গণহত্যা নামে পরিচিত। এক তীর্থভূমি রাতারাতি পরিণত হয়েছিল বধ্যভূমিতে। রমনা কালীমন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী পরমানন্দ গিরি সহ সেখানে উপস্থিত প্রায় ১০০ জন নারী ও পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাক সেনারা। শিশুরাও রেহাই পায়নি। এই হত্যাকাণ্ডের সময় রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম দাউ দাউ করে জ্বলেছিল। রমনা কালীমন্দিরের চূড়া ছিল ১২০ ফুট, যা বহুদূর থেকে দেখা যেত। সেটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ওই বর্বর সেনারা। পাকিস্তানি সৈন্যরা রমনা ত্যাগ করার আগে, জীবিত লোকদের পরের দিন সকালে ভারতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। রমনা কালী মন্দিরের অধ্যক্ষ প্রয়াত পরমানন্দ গিরির স্ত্রী সুচেতা গিরি এবং মা আনন্দময়ী আশ্রমের তপস্বী জটালী মা গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকেদের সাথে রমনা ছেড়েছিলেন। একাত্তরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনায় পুনরায় পাকিস্তানি বর্বররা হামলা চালায়।
স্বাধীনতার পর তা গণপূর্ত বিভাগের হাতে হস্তান্তর করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ মন্দির এবং আশ্রমের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেয়। মন্দির এবং আশ্রমবাসী যারা গণহত্যা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা আবার ফিরে আসেন এবং উক্ত স্থানে অস্থায়ী ভিটা করে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে পূজা অর্চনার জন্য অস্থায়ী মন্দির স্থাপন করেন।
ভারত সরকারের অর্থায়নে বর্তমানে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের চূড়ার বর্তমান উচ্চতা ৯৭ ফুট।ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় এসে মন্দিরটি উদ্বোধন করেন।কালী মন্দির পুননির্মাণ,গভীর নলকূপ স্থাপন,শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম এবং রাস্তার পাশে মেইন গেইট নির্মাণের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাজেট হিসেবে ধরেন।তারই ধারাবাহিকতা ভারত সরকারের অর্থায়ন এবং মন্দির নির্মাণ কমিটির মাধ্যমে কালী মন্দির পুননির্মাণ হয়।
আগামী পর্বে আসছে প্রকল্পের আয়,ব্যায়,উন্নয়ন,শুভঙ্করের ফাঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত।