করোনা মহামারীর আগে থেকেই বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী তারা। এজন্য তারা দেশী-বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু ক্রেতাদের প্রস্তাবিত দাম তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। ফলে নতুন ক্রেতার কাছে বিক্রির প্রস্তাব ও দরকষাকষির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় করপোরেট গ্রুপের কাছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন ‘মোহাম্মদ ভাই’ পরিবারের সদস্যরা। একটি ব্যাংক ও বেশ কয়েকটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তাদের পক্ষ হয়ে ক্রেতাদের কাছে শেয়ারগুলো বিক্রির জন্য দেনদরবার করছে। শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক পক্ষসহ বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বর্তমান বাজার মূলধন ৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। আর ১০২ কোটি টাকা বাজার মূলধন আছে এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের। দুটি কোম্পানিরই সিংহভাগ শেয়ারের মালিকানা মোহাম্মদ ভাই পরিবারের। এর মধ্যে শুধু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মালিকানাধীন শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ৫৫০ কোটি টাকার বেশি।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্রের ভাষ্যমতে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ‘মোহাম্মদ ভাই’ পরিবারের ব্যবসা রয়েছে। দেশে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হত্যাকাণ্ড, মাদক বাণিজ্যসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে পরিবারটি। এ অবস্থায় বাংলাদেশে থাকা কোম্পানিসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এ পরিবারের সদস্যরা থাইল্যান্ডে স্থায়ী নিবাস গড়তে চাইছেন। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয় গত বছরের ২৬ মার্চ। এর একদিন আগে ‘মোহাম্মদ ভাই’ পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
এ বিষয়ে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব নাজিমউদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্যাডবেরির অলিম্পিকের শেয়ার কিনে নেয়ার গুঞ্জন আমাদের কানেও এসেছে। এ বিষয়ে কোম্পানির পর্ষদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা এটিকে গুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। এ মুহূর্তে কোম্পানি বিক্রির কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সম্প্রতি পরিবারের একজন সদস্য দেশে এসেছেন। তিনি মাঝেমধ্যে কোম্পানিতে আসছেন।
দেশের শিল্পাঙ্গনের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতেও বিপুল আলোচিত এক চরিত্র আজিজ মোহাম্মদ ভাই। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হিসেবে যেমন তিনি প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের নানা ঘটনায় বিতর্কিতও হয়েছেন। চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুকে ঘিরে এখনো আলোচনায় আসে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম। পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারিতেও তার নাম জড়িয়েছে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই বর্তমানে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তার চাচা মুবারক আলী রয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। মুবারক আলীর ছেলে মুনীর আলীও অলিম্পিকের পর্ষদ পরিচালক। একই দায়িত্বে রয়েছেন মুবারক আলীর দৌহিত্র তানভীর আলীও। দীর্ঘদিন ধরে দেশে না থাকলেও এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেই। তার স্ত্রী নওরীন আজিজ মোহাম্মদ ভাই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া কোম্পানিটির পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ভাইয়ের দুই মেয়ে নুরজাহান হুদা ও সাকিনা মিরালি। এর বাইরে ম্যান্টিকোর ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যান্টিকোর টেকনোলজি, এমকো হোল্ডিং, বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ও অক্সাস এন্টারপ্রাইজের পর্ষদেও তারা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবর্তমানে তার স্ত্রী নওরীন আজিজ মোহাম্মদ ভাই সব ব্যবসার দেখভাল করেন বলে জানা গেছে।
সৌজন্যে : বণিক বার্তা