নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নারী অধিকার দাও, নারীর অধিকার দাও- বলে চিৎকার করে ও বক্তব্য দিলেই হবে না। খালি আন্দোলন করলেই অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সেটা আদায় করতে যোগ্যতা লাগবে। সে যোগ্যতা শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আসবে।’
সোমবার (৮ মার্চ) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শিশু ও মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে শিশু একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, জননী ও নারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। জাতীয় সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা সব নারী। এভাবে রাজনীতিসহ বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসছে। অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সফলতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মেয়েরা আসতে পারতো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা এসে উচ্চ আদালতেও নারীদের নিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ডসহ সব বাহিনীতে নারীদের অংশ নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিদেশি কূটনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও নারীরা হচ্ছেন। স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রেখেছি। ব্যাংকের এমডি, গভর্নর, খেলাধুলাসহ সব জায়গায় নারীদের সুযোগ আছে। ’৯৬ সালে রাজশাহীতে প্রমীলা ফুটবল খেলা প্রচণ্ড বাধার মুখে হতে পারেনি, এখন সে অবস্থা নেই।’
নারী উন্নয়নে সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫ প্রণয়ন করেছি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরোধ কর্মপরিকল্পনাসহ নারী সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করেছি। নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কর্মজীবী নারী হোস্টেল করেছি। ৬৩টি শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র করেছি। সব জায়গায় এটি করতে নির্দেশও দিয়েছি। ৩২০০ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নারীদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। আমার বাড়ি, আমার খামারের মাধ্যমে নারীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করেছি। মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি, এতে নারীকেও মালিকানা দেয়া হচ্ছে।’