সামনেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল বিধানসভা কেন্দ্র ‘নন্দীগ্রাম’ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করবেন দলটির প্রধান ও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আগমীকাল বুধবার হলদিয়াতে গিয়ে এই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন। তার আগে মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে পা দিয়েই বহিরাগত ইস্যুতে ফের সরব হলেন তিনি।
তার অভিমত দিল্লি থেকে যারা রাজ্যে আসছেন তারা বহিরাগত হলেন না, আর আমি রাজ্যের মানুষ হয়ে বাইরের লোক হয়ে গেলাম! তবে তো আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়াটাও উচিত হয়নি!
গত সপ্তাহে কলকাতার ‘ভবানীপুর’ কেন্দ্র ছেড়ে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুরের ‘নন্দীগ্রাম’ কেন্দ্রে মমতাকে প্রার্থী ঘোষণার পরই ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করে ছিলেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাজ্যটির সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ওই কেন্দ্র থেকে মমতাকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন শুভেন্দু। এমনকি নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মমতাকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে তার নামে ফ্লেক্সও পড়েছিল।
প্রার্থী হওয়ার পর মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে প্রথম কর্মীসভা থেকে সেই বহিরাগত ইস্যুতে সরব হন মমতা। তিনি বলেন ‘ভবানীপুর তো আমার ঘরের কেন্দ্র ছিল। তারপরও আমি নন্দীগ্রামে কেন দাঁড়ালাম? আমি শেষবার এখানে এসে বলেছিলাম নন্দীগ্রামে যদি আমি দাঁড়াই, কেমন হবে। আপনারা বললেন খুব ভালো হবে। আপনাদের উৎসাহ উদ্দীপনা সম্মান, মা-বোনের ভালোবাসা দেখে নন্দীগ্রামকে বেছে নিয়েছিলাম। …কিন্তু আমাদের দলের সহকর্মীরা যদি মনে করেন আমার দাঁড়ানো উচিত নয় তবে আজকেই বলে দিন, আমি চলে যাব। আমি তাহলে দাঁড়াবো না। আর যদি মনে করেন আমি আপনাদের ঘরের মেয়ে, আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গী তবে আগামীকাল মনোনয়ন জমা দিতে যাব।’
তার অভিমত ‘কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন আমি নাকি বাইরের লোক। আমি বাংলার লোক হয়ে বাইরের হয়ে গেলাম। আর যারা দিলি থেকে আসছে, তারা বাইরের লোক হলো না। তবে তো আমি বলবো বাংলায় আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়াটাই উচিত ছিল না। কারণ বহিরাগত কখনো কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে? আপনারাই বলুন।’
আগামী ২৭ মার্চ থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে নির্বাচন। মোট আট দফায় আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ পর্ব। দ্বিতীয় দফায় আগামী ১ এপ্রিল নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে ভোট। ওই দিনই ‘খেলা হবে’ বলেও হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন মমতা ব্যানার্জি।
ধর্মীয় ইস্যুতেও বিজেপিকে নিশানা করে মমতার দাবি প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তিনি চন্ডীপাঠ করেন, তাই বিজেপি যেন তাকে হিন্দু ধর্ম শেখাতে না আসে।
তিনি বলেন ‘যারা হিন্দু-মুসলিম করছে, তাদের আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই… আমিও হিন্দু ঘরের মেয়ে। আমার সাথে হিন্দু কার্ড খেলতে যাবেন না। আমার সাথে হিন্দু কার্ড খেলতে গেলে আগে আপনারা নিজেরা হিন্দু কিনা সেটা দেখুন। কারণ হিন্দু ধর্মের আদর্শ হল মানুষকে ভালোবাসা।’
মমতার হঁশিয়ারি ‘আমায় হিন্দুধর্ম শেখাচ্ছেন? কোনটা চান? ধর্ম নিয়ে খেলবেন? খেলা হবে? লক্ষীপাঠ, সরস্বতীপাঠ, চণ্ডীপাঠ, জগন্নাথ পাঠ…খেলবেন? কবে খেলবেন?’
কর্মীসভার পর নন্দীগ্রামে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন। পরে সিংহ বাহিনীর মন্দিরে গিয়ে পূজাও দেন তিনি।