আবুধাবির শারজাতে একটি সোফা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে নোয়াখালীর সেনবাগের ৩ প্রবাসী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের বাড়িতে এ খবর পাওয়ার পর শোকের মাতম বইছে। অসহায় পরিবারগুলো একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা। সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা এবং দ্রুত মরদেহ ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা।
আবুধাবির শারজাতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতরা হলেন- সেনবাগের ডমুরুয়া ইউনিয়নের পলতি মতইন (তারাবাড়ী) গ্রামের আবু তাহের পাটোয়ারী বাড়ির প্রয়াত আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. ইউছুপ মিয়া (৪৩), একই এলাকার বড়বাড়ির মীর আহম্মদের বড় ছেলে তারেক হোসেন বাদল (৪০) ও হারিছ মিয়ার বাড়ির আবদুল ওহাবের ছেলে মো. রাসেল (৩০)।
নিহত রাসেলের একমাত্র এক বছরের কন্যা শিশুটিও প্রতিবন্ধী। এছাড়া রাসেল ও বাদলের পরিবারের তিনজনই প্রতিবন্ধী। তারা সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা ও দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
মঙ্গলবার সকালে ৭টার দিকে তিনজনের পরিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানতে পারেন। এরপর একই গ্রামের তিন পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন, প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন তিন বাড়িতে। নিহত ইউছুপের ছোট ভাই ডা. গোলাম রসুল জানান, তার বড় ভাই দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আবুধাবিতে প্রবাস জীবনযাপন করে আসছিল। এক বছর আগে তিনি আবুধাবির শারজাহতে সামাইয়া পাঁচ নম্বর এলাকায় ধার-দেনা করে একটি সোফা ফ্যাক্টরির ব্যবসা শুরু করেন। এলাকার বেশ কয়েক জনকে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান।
নিহত ইউছুপের দুই সন্তান পিতাকে হারিয়ে স্তব্ধ। তার শতবর্ষী মা শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার আকুতি জানান সরকারের কাছে।
নিহত বাদলের পিতা মীর আহাম্মদ জানান, ১ বছর আগে দায়-দেনা করে ছেলেকে আবুধাবি পাঠান। ঘটনার দিন রাতে বাড়ির পাশের ইউছুপের কাছে বেড়াতে যান বাদল। সেখানে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বাদলের অপর দুই ভাই প্রতিবন্ধী। তার তিন ছেলে লেখা পড়া করছে। ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা তার বাবা।
সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের একই গ্রামের নিহত রাসেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে কান্নার রোল। সন্তানকে হারিয়ে নিহত রাসেলের মা শরীফা বেগম জ্ঞান হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। রাসেলের চাচা সাহাব উদ্দিন জানান, গত বছরের এপ্রিল মাসে ধার-দেনা ও কিস্তি নিয়ে রাসেল ইউছুপের সোফা ফ্যাক্টরিতে যায়। নিজের কোনো ভূমি বা বসতঘরও নেই। পরিবার নিয়ে থাকেন চাচার ঘরে। তার মা, স্ত্রী ও এক সন্তান চাচা আবদুস ছাত্তারের ঘরে থাকেন। কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি রাসেল। রাসেলের একমাত্র কন্যা সন্তানও প্রতিবন্ধী। এই তিন পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা ও দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।