প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এশীয় দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ভাষা আছে। কিন্তু আমাদের ভাষা একটাই। আমরা এক দেশ, এক জাতি, এক ভাষা।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে বারবার কারাবন্দী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে বন্দী থেকেও বঙ্গবন্ধু নিশ্চুপ থাকেন নি। তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন। যখনই মুক্তি পেয়েছেন তিনি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং জনতাকে বিশেষ করে সংগঠিত করেছেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য ছাত্রদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করেন।
তৎকালীন গোয়েন্দা রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৎকালীন ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর নামে রিপোর্ট এসেছে, তিনি ছাত্রদের উস্কে দিচ্ছেন।
পাকিস্তানিরা বাংলা বর্ণমালার বিরোধী ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকের বলেছিল, উর্দু বর্ণমালায়, ল্যাটিন বর্ণমালায় বাংলা লিখতে হবে। অথচ আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ বর্ণমালা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আপনারা দেখবেন, তিনি শুধু বন্দী নয়, কারাগারের বাইরে থেকে অনেক জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি যখনই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই চক্রান্ত শুরু হয়। বাঙালির মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যেকোনও অর্জন তাদের কাছে ভালো মনে হয় না। তারা পরাধীনতার মধ্যে থাকতে চায়। তিনি বলেন, ‘একটা শ্রেণি আছে, যারা আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতে চায় না। আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে তুষ্টি পায়। তারা এই অর্জনের কথা বলতেও যেন দ্বিধান্বিত। এরা কেন এরকম, সেটা আমার নিজের কাছেও প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় ভাষার লড়াই, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা এই স্বীকৃতি পেয়েছি। এই মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর, এতে ভালো ফল হয়, আগাছা-পরগাছাও হয়। আমরা স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চায় বাঙালি বিশ্ববাসীর সামনে স্বমহিমায় গৌরবে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই চাই।’
বঙ্গবন্ধু বাংলাকে খুব ভালোভাবে জানতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘৭০ এর নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, মাত্র দুটো সিটে জিততে পারবো না। এটা বলতে পেরেছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে সেটি মিলেও গিয়েছিল। এরপর তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এরপর ৭ মার্চের ভাষণ। সেটি আজ প্রামাণ্য দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে নিয়ে আমাদের তিনি স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুললেন। তারপরেই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট। এই ঘটনার পরপরই আমাদের সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কথাও মুছে ফেলা হয়। কিন্তু জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ কেউ পারেওনি। বাঙালি মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে গেছে। সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। মনে রাখবেন, কোনও সংগ্রাম বৃথা যেতে পারে না।’’
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির মূল ভাষা একটাই। আমরা একটা জাতি, একটা ভাষা। সেটা বাংলা। আমাদের নৃগোষ্ঠিদের জন্য কিছু ভাষা আছে। সেটা কিন্তু ওই রকম ব্যাপক না। সেটা এতটাই ক্ষুদ্র যে অনেকের বর্ণমালাও নেই। তবুও আমরা সেগুলো খুঁজে বের করছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৩ সালে শহীদ দিবস প্রথম পালন করেন। তিনি খালি পায়ে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া, আজীমপুর কবরস্থানে যাওয়া, শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো শুরু করেছিলেন। সেটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেয়া যায় না, সেটি একদিন না একদিন উদ্ভাসিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে আমরা কিন্তু থেমে নেই। যতো বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেনো, আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, যারা বিদেশে বসে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই তারা সফল হতে পারছেন না, পারবেও না।
সভা শেষে তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘এখন থেকে বাংলাদেশ চিরজীবী হোক লাগবে না। জয় বাংলা স্লোগান দিলেই হবে।’ জোরে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তিনি সভা শেষ করেন।
এসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের আরও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।