সেই ফেরা দেড় মাসের ছুটি কাটিয়ে। প্রথমে সপরিবারে দুবাই যাবেন।
সেই ফেরা দেড় মাসের ছুটি কাটিয়ে। প্রথমে সপরিবারে দুবাই যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী সময় দিয়েছিলেন ১০ মিনিট। কিন্তু মাশরাফির ঠিক মনে নেই কতক্ষণ গণভবনে ছিলেন, ‘অনেকক্ষণ। একটা সময় আমি উঠে যাই। আমার মনে হয়েছিল তামিমের যদি আরো কিছু বলার থাকে, তবে সেটা সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন খুলেই বলুক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা কথা হয়েছে তামিমের।’
তামিমের নিজের ঘড়ি বলছে আরো বেশি, ‘আমি ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী এত সময় দেবেন। উনি আমার আর আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো কথা বলেছেন। উনার পরিবারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় সামলে কিভাবে এত দূর এসেছেন, সেই আবেগঘন বর্ণনা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। উনি আমাকে যে সাহস জুগিয়েছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। বলতে পারেন, আমার ছোট্ট এই জীবনে আজকের দিনটি ভীষণ স্পেশাল।’
১০ মিনিটের বৈঠকের কথা জেনে গণভবনে ঢোকা তামিম ইকবালকে ঘিরে ধরেছিলেন উপস্থিত কর্মকর্তারা। সবার এক কথা—অবসর থেকে ফিরতে হবে। মাশরাফিসহ ভেতরে ঢোকার পর তামিমকে দেখে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘কী পাগলামি শুরু করেছ? খেলা ছাড়বে কেন? আমি কোনো কথা শুনব না। তুমি যত দিন খুশি ছুটি নাও, চিকিৎসা করাও। কিন্তু বিশ্বকাপে তোমাকে দেখতে চাই। এটাই আমার শেষ কথা।’
এই নির্দেশে আন্তরিকতার ছোঁয়া আঁচ করা মাশরাফি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অধিকারবোধ থেকে কথাগুলো বলেছিলেন, তখনই আমি বুঝে গেছি তামিমের না করার উপায় নেই। আর সত্যি বলতে কি, ওর বয়স কত যে অবসর নেবে? ও যদি ভাবত যে ফুরিয়ে গেছে, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সে রকম তো কিছু না। আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, ঠিক তা-ই। ভিন্ন চাপ ওকে সিদ্ধান্তটা (অবসরের) নিতে বাধ্য করেছিল। সেই সমস্যা আর হবে না, আশা করি। বোর্ড সভাপতিও সে আলোচনায় ছিলেন। সবাই সম্মত হয়েছেন। আর কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয়নি। তামিমকে আমি চিনি। ওকে জোর করে কনভিন্স করা যায় না। তবে পুরো আলোচনার যতটুকু সময় ছিলাম এবং শেষ হওয়ার পর ওকে দেখেই বুঝে গেছি, খুশি মনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে তামিম।’
কিন্তু এমন ঘটা করে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন সিদ্ধান্ত বদল ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের তামিম ইকবাল এবং বাংলাদেশ দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের জন্য কতটা ভালো হলো? উত্তরে মাশরাফির ‘কাটার’, ‘সমস্যা হবে কেন? প্রথমত ক্রিকেটার তামিম ফুরিয়ে যায়নি। দলের কেউও ওকে বের করে দেয়নি। ও যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, তার কারণ কোনো ক্রিকেটার নয়। এটা দলের সবাই জানে। দ্বিতীয়ত, যে সমস্যা তামিমকে সিদ্ধান্তটা নিতে বাধ্য হয়েছিল, তা আর হবে না। সেটা তো আগেই বলেছি। আমি কোনো সমস্যা দেখি না। বরং এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ সেই ‘সমস্যা’ হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর এই সমস্যা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না হয়তো।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় আবেগের কথাও তামিমকে স্মরণ করিয়েছেন, ‘তুমি অবসর নিয়েছ শুনে লোকজন রাস্তায় কান্নাকাটি করছে। এটা দেখেও কি তুমি বুঝতে পারো না? চলার পথে অনেক সমস্যা আসবে। তবে সেসব জয় করে এই মানুষগুলোর জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে, এটা মনে রাখবে।’
এমন আরো অনেক কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা তামিম ইকবালের ওপর গত মাস ছয়েকে ভর করা প্রবল চাপ সরিয়ে নিয়েছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই।