১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক, আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কিভাবে সবাই মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আমুর সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব। এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে, এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।’
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংলাপ নিয়ে বক্তব্যটি তাঁর ব্যক্তিগত। এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি ১৪ দলেও আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে (আমু) যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কথাটি গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি সেভাবে বলেননি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সরকারের আন্তরিকতার কথা বিএনপিকে জানানো হচ্ছে। বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়। ফলে তাদের নির্বাচনে আনার জন্য আলাদা করে সংলাপের দরকার পড়বে না।
আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন , নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। আমির হোসেন আমু যে মত দিয়েছেন সেটাও একটা বক্তব্য। তবে এ বিষয়টি ১৪ দলে আলোচিত হয়নি।
বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বানের বিষয়টি গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় স্পষ্ট করেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘কাউকে আহ্বান করা হয় নাই। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নাই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার কথা কাউকে বলা হয় নাই, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় নাই।’
১৪ দলের জনসভায় দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেন, ২০১৩ সালের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছিল, সেদিনও জাতিসংঘের সামনে আলোচনার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, তোমরা পরাজিত হয়েছিলে। আবারও সেই নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না।
আমু বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তাঁর অধীনে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা ক্ষমতা কার হাতে দেবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলে যাই। কাউকে আলোচনার জন্য নয়।’
আমির হোসেন আমু গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। নানা মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও চাপ আছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক বাস্তবতায় বিএনপির নির্বাচনে না আসার কারণ নেই। ফলে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার বিষয়টি এই মুহূর্তে বিবেচনায় নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার কথা মাঠে নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে আছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে আলোচনায় ব্যস্ত রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ ব্যাহত করার কৌশল নিতে পারে আওয়ামী লীগ।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই।’
বিএনপির প্রতিক্রিয়া : এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীরা ‘এলোমেলো’ বক্তব্য দিচ্ছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিএনপি সন্ত্রাসী দল, এরা সন্ত্রাস করে। এদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আর কালকে (মঙ্গলবার) আমির হোসেন আমু বলেন যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন। আবার আজকে (বুধবার) শুনলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সঠিক না। ওবায়দুল কাদেরেরটা সঠিক না আমির হোসেন আমুরটা সঠিক?’
মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। তারপর ওই সংবাদ প্রত্যাহার করে নিলেন। সব কিছুতেই এলোমেলো যে হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।