আজ ২১ এপ্রিল ২০২১ রোজ বুধবার বেলা ১২ ঘটিকায় বাংলাদেশে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর উদ্যোগে সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গ্রাহকদের পর প্রস্তাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে জীবনযাত্রাকে সচল রাখতে একমাত্র নির্ভরযোগ্য ভরসার মাধ্যম হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা। তাই এ সেবার বাজেট জাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপির প্রায় বর্তমানে ৭% অর্জিত হয়। এর পাশাপাশি যদি আমরা খাতসংশ্লিষ্ট ইকমার্স, টেলিমেডিসিন সামগ্রিক হিসাব করি সফটওয়্যার আমদানি-রপ্তানিসহ যোগ করলে দাঁড়াবে জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ এতে কোন সন্দেহ নেই। একহাতে গ্রাহকদের বিনিয়োগ সবচাইতে অগ্রগামী তাই আসন্ন বাজেটে গ্রাহকদের চাহিদা ও আকাঙ্খা দুটোই বাজেটে পরিলক্ষিত হবে বলে আমরা আশা করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রাহকরা তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে আজ করে চলেছে এক ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে পড়ারফ-১৯ দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব কম হয়েছে। বৈশ্বিক জিডিপি ২০২০ সালে ৪.৪% কমে গেলেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪%। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ ৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জনবান্ধব বাজেটের কোন তাই বিকল্প নাই। তারই ধারাবাহিকতায় কোভিড- ১৯ এর বর্তমান সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মাথায় রেখে একটি যুগোপযোগী বাজেট তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও প্রসার নিশ্চিত করতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাত অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে মুঠোফোন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩২ লাখ। ২০০৮ সালে যেখানে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো এখন করোনা মহামারীর মধ্যে তা দাঁড়িয়েছে ২২০০ জিবিপিএস। কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের কথা বিবেচনায় নিয়ে কর পরিবর্তনে বেশ কিছু সংস্কার অবশ্যক।
বাংলাদেশে বর্তমানে ডেটা ব্যতীত মোবাইল সেবা ব্যবহারের উপর কার্যকরী ট্যাক্স আরোপিত রয়েছে ৩৩.২৫% (ভ্যাট ১৫%, সম্পূরক শুল্ক ১০%, এবং সারচার্জ ৫% ) এবং মোবাইল ইন্টারনেট কথা ডেটা সেবার উপর তা ২১.৭৫% (ভ্যাট ৫% সম্পূরক শুল্ক ১০% সারচার্জ ৫%) অর্থাৎ গ্রাহককে ১০০ টাকা সমমূল্যের সেবা ব্যবহার করতে গেলে আরো ৩৩.২৫ টাকা ট্যাক্স আকারে দিতে হয়। যা ডাটার ক্ষেত্রে ২১ দশমিক ৭৫ টাকা। এখানে উল্লেখ্য যে গত বছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ১০% থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মোবাইল অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ১০০ শতাংশ মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ রয়েছে। কিন্তু একক গ্রাহক বিবেচনায় তা ৫৪% মানুষ মোবাইল সেবা ব্যবহার করছে। এখনো মোবাইল সেবার বাইরে রয়েছে আরও ৪৬ শতাংশ গ্রাহক। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় উচ্চ কর হার।
নতুন সিম সংযোগ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এখন সিম প্রতি ২০০ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় ইনটেক্স মোবাইল সেবা গ্রহণের পথে একটি বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এসব ট্যাক্স প্রত্যাহার করা না হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোবাইল সেবা ব্যবহারের গতি সঞ্চার এর আশা করা যায় না। মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবার বাজারে এক সময় ৬ টি. অপারেটর সেবা দিল বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ টি অপারেটরের মধ্যে। মোবাইল সভার উচ্চ মান নিশ্চিত করতে অপারেটরদের অধিক স্পেক্ট্রাম অধিগ্রহণ জরুরী। সদ্য সম্পন্ন স্পেক্ট্রাম নিলামে সকল স্পেক্ট্রাম বিক্রি হয় আমরা সরকার ও অপারেটর এবং কমিশনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কিন্তু নিলামের সময়কাল ও অপারেটর ভেদে স্পেকট্রাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক সক্ষমতা পর্যালোচনা করলেই এটি পরিষ্কার যে অনেক মোবাইল অপারেটর টেকসই অবস্থানে নেই। আমরা কত ২০১১-১৫ এর সাথে ২০১৬-২০ সময়কাল টেলিযোগাযোগ খাতের সম্মিলিত সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিমাণ তুলনা করে দেখতে পেয়েছি পরবর্তী ৫ বছরে তা ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এর পিছনে বড় একটি কারণ উচ্চ কর্পোরেট কর হার (শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত হলে ৪০ শতাংশ না হলে ৪৫ শতাংশ সাধারণ হার ৩২.৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ) এবং ইউরোপ অন্যতম ২% কর যা অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি। (ন্যূনতম পর তামা খাতের ওপর ১% একক কোম্পানির ক্ষেত্রে তা ০.৫ শতাংশ এবং অন্যান্যদের ওপর ০.৬ শতাংশ)। অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশ কর্পোরেট কর হার সবচাইতে বেশি যেমন ভারতে ২২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ, নেপালে ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ এমনকি আফগানিস্থানে ২০ শতাংশ। কর্পোরেট কর কমাতে আমরা এই জন্যই সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি যে এই কর্পোরেট পরও গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় পরোক্ষভাবে।
দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রার্থী ও সরবরাহের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধক কর হার। নানাবিধ হার বিদ্যমান থাকায় গ্রাহকরা উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও লক্ষ করা যায় ভ্যাট ১৫ শতাংশ। বাস্তবে ইন্টারনেটের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পর সম্পৃক্ত থাকায় পর অনেক বেশি। যেমন- ইন্টারনেট মডেম, ইন্টারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারি সহ সকল ইন্টারনেট ইকুইপমেন্টের বর্তমান আরোপিত কর ১০ শতাংশ। আমরা এই কর শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সরকারকে বিনীত অনুরোধ করেছ
মোবাইল হ্যান্ডসেট এ উৎপাদন উৎসাহিত করতে বর্তমানে ৫% হার বিদ্যমান রয়েছে তা আগামীতেও বহাল রাখতে সুপারিশ করছি। সেই সাথে আমদানির ক্ষেত্রে ফরহাদ ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা হয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিকভাবে সর্বমোট আমদানির পর দাঁড়ায় ৫৭% । আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে কম মূল্যে হ্যান্ডসেট সরবরাহ করতে শর্তসাপেক্ষে অপারেটরদের সংযুক্ত সহ এই গরমে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সুপারিশ করছি।
এক্ষেত্রে ভ্যাট ২৯ শতাংশ যাহা আরো কমিয়ে আনা যেতে পারে। বর্তমানে ড়হঁ ্ ড়ষঃ ওপর ট্যাক্স ৩৭ শতাংশ ও ৫৯ শতাংশ আরোপিত রয়েছে, যা আইসিটি ও ইন্টারনেট খাত সম্প্রসারণে প্রধান প্রতিবন্ধক। ঙহঁ ্ ড়ষঃ মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রাহক ব্যবহার করে থাকে তাই একহাতে উপর ট্যাক্স ও ইন্টারনেট মডেম এর মত করা হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে খঞঈ সেবার ক্ষেত্রে বর্তমান ৫% কর আপনার বহাল রাখা। রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর টেলিটককে প্রতিযোগিতায় আনতে আরো পর্যাপ্ত বিনিয়োগ অস্বচ্ছতা আনয়নে প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুপারিশ করছি। বিটিসিএলকে আরো গতিশীল করে এর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে এর সেবা সহজলভ্য করে প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছাতে আমরা সুপারিশ করছি এবং এই প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি বন্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
পরিশেষে গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় মোবাইল সেবার উচ্চ মান নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং একইসাথে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে দ্রুততার সাথে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।