ডিসেম্বরে আসল মোকাবিলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে। ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। গুম খুনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। কত মানুষকে তোমরা হত্যা করে আজ বড় বড় কথা বলো! আজ নাকি তারা বাধা পাচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে একুশে ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা সভা পিটিয়ে পণ্ড করেছে। এই দল কে? এই দলের বিরুদ্ধে খেলা হবে। মোকাবিলা হবে রাজপথে। আসল মোকাবিলা হবে ডিসেম্বরে।’
ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ভুলে যান। সারা দুনিয়ায় যেভাবে নির্বাচন হয় আমাদের সংবিধানেও সেভাবেই নির্বাচনের কথা আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে। সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বিএনপির মতো গুন্ডা-ফুন্ডা নিয়ে ১১টার আগে ভোট শেষ করার বিরুদ্ধে খেলা হবে। মোকাবিলা হবে। তাদের কোথাও ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজার, আবার কোথায় ষাট সত্তর হাজার লোক জমায়েত হয়। তারা বলে লাখ লাখ নাকি! আমাদের এই নারায়ণগঞ্জেই লাখ মানুষ এখানে জমায়েত হয়েছে। এই লাখ লোক দিয়েই অ্যাকশন হবে, খেলা হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ সংগ্রামী মানুষ। ডিসেম্বরে জনতার গর্জন শুনতে পাবেন। ফখরুল সাহেব কান পেতে থাকুন। শুনতে পাবেন। আমাদের নেতা শেখ হাসিনা। আপনাদের (বিএনপি) নেতা কে? কাপুরুষের মতো আর রাজনীতি করব না-এই মুচলেকা দিয়ে লন্ডন পালিয়েছেন। হাওয়া ভবনের সেই যুবরাজ। খেলা হবে হাওয়া ভবন, লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান ও আইভীর প্রশংসা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্ম ও ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার এই নারায়ণগঞ্জ। শামীম ফাইটার পলিটিশিয়ান। তাঁর সাথে আছে পর পর তিন বার নির্বাচিত জনমানুষের মেয়র। আজকের এই সম্মেলনে তাঁরা দুজনই এসেছেন। আমার আসা সার্থক হয়েছে কারণ এখানে এক সাথে সবাই বসে আছেন, ইনক্লুডিং শামীম এন্ড আইভী। নারায়ণগঞ্জের শক্তি হচ্ছে এরা। আগামীদিন কঠিন দিন আসছে।’
বৈশ্বিক সংকটের প্রসঙ্গ তুলে দলের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘মানুষ চেহারা দেখে ভোট দেয় না, উন্নয়ন দেখে ভোট দেয়। শেখ হাসিনা কী কম করেছে? নারায়ণগঞ্জকেই দেখুন, ১৩ বছর আগে কী ছিল আর এখন কী হয়েছে! বৈশ্বিক সংকটের জন্য আমাদের দায়ী করবেন না। আমরাও কষ্টে আছি, আপনাদের কষ্ট দেখে। এর আগে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি ছিল? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ছিল? শেখ রেহানা আজ লন্ডনে বাসে চেপে যাতায়াত করেন। প্রধানমন্ত্রীর চোখে আজ ঘুম নেই, আর সেটা আপনাদের জন্য, জনগণের জন্য। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার চেয়ে যোগ্য, ভালো মানুষ, সৎ মানুষ রাজনীতিতে নেই। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে চায়। আগামীতে বাংলার মানুষ ইনশা আল্লাহ শেখ হাসিনাকেই নির্বাচিত করবেন।’
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কমিটির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন নেতাদের তো আসতে দেন না। মশারির ভেতরে মশারি টানান। বসন্তের কোকিল আছে, দুঃসময়ের কর্মীরা নেই। এই আওয়ামী লীগের দরকার নেই। কিছু মানুষ আছে, টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। আর কত টাকা দরকার তাদের? কে কী করেন সব শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট আছে। প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি মাথা নাড়ছেন, পদ বাণিজ্যের কথা যেন না শুনি। পকেটের লোক আমাদের চলবে না। নেত্রী কমিটি দেখবেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। উনি দেখে আমাকে নির্দেশ দিবেন, তারপর আমি আপ্রুভ করব। এবার তদন্ত করে কমিটি দেব। পয়সা খেয়ে যারা কমিটি করে, এই ধরনের নেতা আমাদের প্রয়োজন নেই। মাথা নাড়ছেন অনেকেই, কে কী করেন সব জানি। ভালো হয়ে যান, আর করবেন না। নিজেদের সংশোধন করুন। ত্যাগী কর্মীদের সাথে প্রতারণা করবেন না। এখন এসে ভিড় করে অনেকেই। দুঃসময় এলে বাতি জ্বালালেও পাঁচ হাজার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। এই নেতার কী দরকার আছে?’
উল্লেখ্য, সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলকে পুনরায় স্ব স্ব পদে বহাল রাখা হয়েছে।