1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ অপরাহ্ন

আসামি ইনোসেন্ট, অপরাধী হলে চোখ দেখেই বুঝতাম : হাইকোর্ট

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে করা মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আট সপ্তাহ পর ওই শিক্ষার্থীকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
জামিন মঞ্জুর করার সময় আদালত বলেন, দেখে মনে হয় শিশুশিক্ষার্থী সহজ-সরল, ইনোসেন্ট। সে রকম হলে (অপহরণকারী) আমরা চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারতাম।
বুধবার (২২ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে শিক্ষার্থীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সোহেল ও অ্যাডভোকেট কাজী আমজাদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম মাসুদ রুমী।
আদালত প্রথমে ছয় সপ্তাহের জামিন দিতে চেয়েছিলেন। তখন বলা হয়, সামনে তার বার্ষিক পরীক্ষা। পরে আদালত তার আট সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদালত বলেন, তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলাম যেখানে, সেখান থেকে সরলে কেন? তখন শিক্ষার্থী কোনো শব্দ করেনি। এরই এক পর্যায়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির নথি দাখিল করেন আইনজীবী। নথি দেখে আইনজীবীকে আদালত প্রশ্ন করেন, আগে কেন এই নথি জমা দেননি? এটা ঠিক করেননি। এখন এটা কোথায় পেলেন? কখনো এমন কাজ করবেন না। আদালতের কাছে কোনো তথ্য গোপন করবেন না।
এরপর আদালতের পেছনে থাকা তার বাবা ও চাচাকে ডেকে সামনে নিয়ে আসেন বিচারক। হাইকোর্ট বলেন, আমরা এ ছেলের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলে জানতে পেরেছি, সে সত্যিকার কোনো দোষ করেনি। এখানে বলা হয়েছে, উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ভিকটিমকে সিগারেট, গাঁজা ইত্যাদি সেবন করানো হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি বা অনেক সময় দেখা যায় ভিকটিমকে নিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়েছে, রাস্তায় ইভটিজিং করেছে, কিন্তু বলা হয়েছে, তাকে রাস্তা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে। এর আগে তার দুলাভাইকেও এভাবে তুলে নিয়েছিল। সকালে তুলে নিয়ে গেছে, সন্ধ্যার পর রাস্তার ওপর ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। কখন কোথায় এবং কীভাবে মেইন রাস্তার ওপরে নামিয়ে দিয়েছে।
আদালত বলেন, এসব দেখে এবং ছেলের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, সে ইনোসেন্ট ছেলে। সে রকম কিছু হলে আমরা চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারতাম। অপরাধীদের কথা থাকে অন্যরকম।
কিশোরকে আদালত প্রশ্ন করেন, তোমার বাবা এলাকায় ঘুরে ঘুরে হাঁস-মুরগি বিক্রি করেন। তুমি ভালো ছেলে। লেখাপড়া করতে চাও? জবাবে শিক্ষার্থী বলে, হুম। তখন উপদেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, তোমার সামনে অনেক সুযোগ। পড়ালেখা করে বড় হতে হবে। তোমাদের মতো ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। আশা করি তুমিও লেখাপড়া শিখবে। লেখাপড়া শিখে যদি বড় অফিসার হও, আমরা বেঁচে থাকি, আশা করি তুমি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
আদালত বলেন, আমরা তোমার জন্য দোয়া করি। তুমি কোনো টেনশন নিয়ো না। এটা কোনো ঘটনা নয়। এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে।
গত ১২ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোর ও তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন এক মেয়ে শিক্ষার্থীর মা। মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় আগাম জামিন নিতে আদালতে এসেছিল কিশোর। ওই কিশোরের বাবা আমির হোসেন ফেরি করে হাঁস-মুরগি বিক্রি করেন। এক রুমের বাসায় স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ পাঁচজন বসবাস করেন।
দীর্ঘ সময় ধরে ওই শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীর বাবা ও চাচার বক্তব্য শোনেন আদালত। প্রাথমিকভাবে আদালতের কাছে মনে হয়েছিল, ওই কিশোর শিক্ষার্থী অপরাধী। পুরো শুনানিকালে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালত থেকে মেয়ে সহপাঠীর জবানবন্দি আনা হয়।
সেই জবানবন্দি পড়ে হাইকোর্ট জানান, কিশোর শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে বলে তাদের কাছে মনে হয়নি। যে ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। পরে পরীক্ষার্থী বিবেচনা করে ওই কিশোরকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে ওই কিশোরের উদ্দেশে আদালত বলেন, তুমি চাইলে বড় পুলিশ অফিসার হতে পারবে। তোমার বাবা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন, কত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন। বাবা-মায়ের কথা মতো চলতে হবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি