আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ফরিদপুরের আরিফুর রহমান ওরফে দোলনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার আদালত।
মঙ্গলবার(৫ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আস-সামছ জগলুল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আরিফুর রহমান কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর- ১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আরিফুর রহমান সম্প্রতি হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন। আদালত তাঁকে জামিন না দিয়ে ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। গতকাল মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য শুনানির দিন ছিল। এদিন আরিফুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে ২২ এপ্রিল সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৬ জুন রাজধানীর কাফরুল থানায় সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২১ সালের ৩ মার্চ সাজ্জাদ-ইমতিয়াজসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার সাহা।
২০২২ সালে অভিযোগ গঠন শুনানির সময় কিছু অসংগতি দেখতে পেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে সিআইডিকে মামলাটি আবার তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পরে গত বছরের ২২ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ আরিফুর রহমানসহ আরও ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
সাজ্জাদ-ইমতিয়াজ ছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রের আসামিরা হলেন সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ওরফে বাবর, তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী এ এইচ এম ফোয়াদ, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ, শহর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান, শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ আলী মিনার ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে যুক্ত হওয়া নতুন আসামিরা হলেন সাজ্জাদের স্ত্রী আফরোজা আক্তার, নিশান মাহমুদ, ইমতিয়াজের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ, বিল্লাল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, অনিমেষ রায়, দীপক কুমার মজুমদার, শামসুল আলম চৌধুরী, শেখ মাহতাব আলী, শহীদুল ইসলাম, ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, সত্যজিৎমুখার্জি, গোলাম মো. নাছিম, জামাল আহমেদ, আফজাল হোসেন খান অমিতাব বোস, বেলায়েত হোসেন মোল্লা, জাফর ইকবাল, চৌধুরী মো. হাসান, আমজাদ হোসেন, স্বপন কুমার পাল, জাহিদ বেপারী, খলিফা কামাল, হাফিজুল হোসেন, রিয়াজ আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাহেব সারোয়ার, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, মো. মনিরুজ্জামান, আবদুল জলিল শেখ, খন্দকার শাহীন আহমেদ, আফজাল হোসেন খান, মোহাম্মাদ আরিফুর রহমান ও রফিক মণ্ডল ।
গত ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। পরে ৭ জুন ফরিদপুরে খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাজ্জাদ-ইমতিয়াজসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক দিন পর ফরিদপুর শহর ছেড়ে ঢাকায় চলে যান সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।