আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে না মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যতীত ও জনগণের রায় ছাড়া কখনো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অনুরোধ জানান। তফসিল ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। এটিকে স্বাধীন করেছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়েছি।
বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা একা ক্ষমতায় যেতে চাই না। সবাইকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, সবাই ভোটে আসুক। তবে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সংলাপের পক্ষে। ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দুবার সংলাপ করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ফোন করেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তার ছেলে মারা গেছে, তখনও গেছেন, কিন্তু তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এবারও রাষ্ট্রপতি তাদের (বিএনপি) ডেকেছেন, নির্বাচন কমিশন ডেকেছে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। এখন নির্বাচনের তফসিল হয়ে গেছে। এখন আর সংলাপ করার মতো সময় নেই।
এসময় ওবায়দুল কাদের জানান, আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় তেজগাঁও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক হবে। এতে অংশ নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। মনোনয়ন ফরম বিক্রয় উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনের পর থেকেই একই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সবাই কিনতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বলেন,‘নির্বাচন কমিশন তার অর্পিতের দায়িত্ব ক্ষমতাবলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছে। আমরা গতকালকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছি, ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা মিনিংফুল নির্বাচন করতে সক্ষম হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আশাবাদী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশনকে সব রকম সহযোগিতা করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছি। গণতন্ত্রকে অনুসরণ করেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা লড়াই-সংগ্রাম করেছি।
শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন শুরু করেছিল। আমাদের গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। ২১ বছর আমরা গণতন্ত্রের দেখা পাইনি। আমাদের বারবার ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয়েছে। এরপরও আমরা লড়াই করে করে টিকে আছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন। এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছেন। শেখ হাসিনা আপসহীনভাবে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছেন।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ শহরে (ঢাকা) অনেকগুলো সমাবেশ হয়েছে। আমাদের শান্তি সমাবেশের কারণে তারা বাধাগ্রস্ত হয়নি। উল্টো বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস করেছে। একজন পুলিশ সদস্যকে পেটাতে পেটাতে তারা মেরে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর করেছে। তারা কখনোই এভাবে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। জনগণের ক্ষতি করে কখনো ক্ষমতায় আসা যায় না।
২৮ অক্টোবরই বিএনপির আন্দোলন শেষ, তাদের বারোটা বেজে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের খুঁটিনাটি, রণকৌশল জানতে হয়। কিভাবে আন্দোলন করতে হয়, সভা-সমাবেশ করতে হয় বিএনপি জানে না। ২৮ অক্টোবরই বিএনপির আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। সেদিনই তাদের আন্দোলন শেষ।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্যাহ, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।