ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে’ বর্ণবাদী আখ্যা দিয়েছেন দেশটির অন্যতম ক্রিকেট ক্লাব ইয়র্কশায়ারের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাবেক খেলোয়াড় আজিম রাফিক।
ব্রিটিশ সংসদের ডিজিটাল, সংস্কৃতি, মিডিয়া ও স্পোর্টস কমিটিকে দেওয়া বক্তব্যে ৩০ বছর বয়সি রাফিক জানান, তিনি যখন ইয়র্কশায়ারে খেলতেন তখন সবসময় বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করা হতো। ২০১৭ সালে তার সন্তান জন্মের সময় মারা যাওয়ার পর ইয়র্কশায়ার ক্লাব তার সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে। ইয়র্কশায়ারে তিনি যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ব্যাপক ভাবে ঘটছিল, তা নিয়ে তার ‘কোনো সন্দেহ নেই।’
বিবিসি বাংলায় আজিম রাফিককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, রাফিক জানান, বর্ণবাদের কারণে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়াটা একটি ‘জঘন্য অনুভূতি’।’ তবে তিনি আশা করছেন, বর্ণবাদের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার ফলে ‘পাঁচ বছর পরে ব্যাপক পরিবর্তন’ আসতে পারে।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এ খেলোয়াড় বলেন, আমি শুধু চেয়েছি ঘটনার সত্যতা মেনে নেওয়া হবে, ক্ষমা চাওয়া হবে, উপলব্ধি আসবে। আসুন, আমরা এক সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করি যাতে এগুলো ভবিষ্যতে আর কখনও না ঘটে।
রাফিক বর্ণবাদী হয়রানি আর বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের সামনে তিনি সাক্ষ্য দেন। তবে ইয়র্কশায়ার বলেছে, তারা কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না।
মাইকেল ভন আর ডেভিড লয়েডের দিকে আঙুল তুলেছেন আজিম রাফিক।
মাইকেল ভন ইতোমধ্যে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে লয়েড এক বিবৃতিতে, কাউকে আঘাত করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
ইয়র্কশায়ারের সাবেক চেয়ারম্যান রজার হাটন পরবর্তীতে সংসদীয় কমিটির সামনে বক্তব্য রাখেন। তারপর বক্তব্য দেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন।
হাটন রাফিকের কাছে ‘গভীরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা’ করেন।
সংসদ সদস্য ডেমিয়েন গ্রিন যখন আজিম রাফিককে জিজ্ঞেস করেন তিনি কি মনে করেন ক্রিকেট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী, রাফিক উত্তর দেন— ‘হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি।’
আরও একটি ক্লাব এসেক্স, যার বিরুদ্ধেও বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে।
বর্ণবাদ বিরোধী সংগঠন হোপ নট হেইট এর প্রধান নির্বাহী নিক লোওলস জানান, রাফিকের জবানবন্দি দেখে তার ‘হৃদয় ভেঙে’ গেছে। তাকে যারা হেনস্তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রাফিক যে সাহস দেখিয়েছেন সেটি যেন মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
নিক লোওলস বলেন, এটি একটি সুযোগ, যাতে আমরা আজিমের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে পারি এবং স্পোর্টস জগত থেকে বর্ণবাদকে চিরতরে বের করে দিতে পারি।
রাফিক প্রথম সোচ্চার হন গত বছর। গত মাসে একটি নিরপেক্ষ প্যানেল তার ৪৩টি অভিযোগের সাতটির পক্ষে প্রমাণ খুঁজে পায়। রিপোর্টে বলা হয়, রাফিক ইয়র্কশায়ার ক্লাবে বর্ণবাদী হয়রানি ও বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন।
তবে ইয়র্কশায়ার ঘোষণা দেয়, তারা কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না।