গত ছয় মাসের মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের অবস্থান সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে সূচক আরো নিম্নমুখী থাকতে পারে। ফলে দীর্ঘদিন মহামারীজনিত অচলাবস্থার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনা এখনো ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে।
রয়টার্স প্রকাশিত খবরে বলা হয়, একদিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে হতাশাজনক পরিস্থিতি, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব। পাশাপাশি করপোরেট খাতের ঝুঁকির মতো বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে ইউয়ানের পতনের পেছনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের পতন ঘটে ৫ শতাংশের বেশি। চীন তখন আন্তর্জাতিক মহলের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়। গতি ফিরতে থাকে কর্মক্ষেত্রে। তার পরও বছরের সবচেয়ে নিচু অবস্থানে থাকা এশীয় মুদ্রার একটিতে পরিণত হয়েছে ইউয়ান। সম্প্রতি প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৭ দশমিক ০৫৮৫ ইউয়ানে এসেছে।
ন্যাটিক্সিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গ্যারি এনজির দাবি, চীনের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার গতি প্রত্যাশিত ছিল না। নতুন কোনো আশাজাগানিয়া সংকেতও নেই সামনে। তার কারণেই ইউয়ানের পতন ঘটেছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দুর্বল মুদ্রা রফতানিতে ইতিবাচক হতে পারে, কারণ বৈশ্বিক বাণিজ্যও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা পার করছে। চীনা অর্থনীতির জন্য কয়েক বছর ধরেই রফতানি অন্যতম প্রধান দিক। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুর্বল হয়ে উঠছে বৈশ্বিক চাহিদা। ফলে হ্রাস পাচ্ছে রফতানি খাত।
বাণিজ্যমন্ত্রী আমদানিকারক, রফতানিকারক, ব্যাংক খাত ও মুদ্রানীতি নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও ইউয়ানের দুর্বল হয়ে পড়ায় তার প্রভাব সংশ্লিষ্ট প্রতিটি খাতকেই আক্রান্ত করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মধ্যেই নতুন নীতি গ্রহণ করেছে। গত মাসে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার (পিবিওসি) পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ডলারের সঙ্গে বিনিময় হার এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এটি একটা গুরুত্বপূর্ণ পাটাতন হিসেবে কাজ করবে।’
আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের বিশ্লেষক আলভিন টান বলেন, ‘ইউয়ানের পতনের ঘটনাটি মূলত অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার লক্ষণ। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার ৭ দশমিক ১ ও শেষ দিকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে প্রাক্কলন করেছিলেন তিনি।
কমার্সব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ টমি উ বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউয়ানের দুর্বল অবস্থাকে স্বীকার করে নিয়েছে। তার পরও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা এর চেয়ে আর অবনমন চান না। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা এখনো মনে করেন ইউয়ানের পতন চলতি বছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও ইউয়ান দুর্বল হলে রফতানিকারকদের লাভ। কারণ তারা ডলার হাতে পাওয়ার পর ভাঙতে গেলে বেশি সুবিধা পাবেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পুঁজি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্বল মুদ্রা ক্ষতিকর। বিনিয়োগকারীদের চোখেই বিষয়টি ভালোভাবে যায় না। মুদ্রায় চলমান অস্থিরতা ভবিষ্যৎ বাজারকেও অস্থির করে তুলতে পারে। বাজার পর্যবেক্ষকদের অনুমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো ডলারের সঞ্চয় হারে সীমা নির্ধারণ করে দেবে। তাহলে কোম্পানিগুলো হয়তো ইউয়ানের ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমাবে। চীনের মিজুহো সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সেরেনা চৌ দাবি করেছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ততক্ষণ পর্যন্ত হাল ছাড়বে না, যতক্ষণ না ইউয়ানের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়।