প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবু আউয়াল বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের ঘোষণা উদ্ভট। এমন ঘোষণা তিনি দেননি।
নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরের সামনে মঙ্গলবার (২৪ মে) তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত শনিবার মাদারীপুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিনার ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
সিইসি বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সিইসি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছেন-এটা উদ্ভট কথা। সিইসি এই ধরনের উদ্ভট কথা বলতেই পারেন না। তবে কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইভিএম সংশ্লিষ্টদের কেউ না কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন। এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। কেউ তার ভালোবাসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন, ইভিএম যারা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন। ওইভাবে কেউ একজন বলেছেন, ওখান থেকে জিনিসটা এসেছে।
তিনি বলেন, কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে এ নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন। এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও একথা বলেননি। কমিশনার তো দূরের কথা, কেউ বলতে পারেন না। আমরা মিডিয়ায় কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্যে, সিইসিকে অপদস্ত করার জান্যে বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের কথা বলার ক্ষেত্রে সবার সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত। দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চাই, শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে আগামী যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সিইসি বলেছেন, ১০ মিলিয়ন ডলার কথাটা উচ্চারিত হয়েছে কোনো প্রসঙ্গে, কোনো একটা জায়গায়। আমার মুখ থেকে নয়, কমিশনের কারো মুখ থেকে নয়। এটা ডিগিং করা উচিত নয়। যারা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, তাদের পণ্যটার প্রশংসা করতে গিয়ে আবেগবশত হয়তো একথা বলেছেন।
একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলতেই পারে। এ ধরনের একটা বক্তব্য কোনো একটা জায়গায় উত্থাপিত হয়েছিল। হয়তো আমার মাথায় নেই। এটা কোট করতে গিয়ে মিস কোটিং হয়েছে। এটাই সত্য, সত্য এবং সত্য।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, আরো কয়েকটি বৈঠক করে আলাপ আলোচনা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাত্র পাঁচ-সাতদিন আগে চিঠি দিয়ে সকলকে জানালাম- ইভিএম নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি, কোনো চাপের মুখে আমরা মাথানিচু করছি না। আমরা যদি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণাই করে দিই, তাহলে হলে ইয়ে (সংলাপ) হবে কেন আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। বারবার বলেছি দায়িতত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও দশটা (মিটিং) হবে। এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিই- ইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই এটা হতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে। দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না-এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মাদারীপুরে বলেছেন) স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে। নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।