স্পোর্টস ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের অষ্টম দিনে এসে অবশেষে পাওয়া গেল সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বাদ। ফরচুন বরিশালের বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করলেন মিনিস্টার রাজশাহী গ্রুপের দুই ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ২২০ রান করেছে রাজশাহী। ম্যাচ জিততে অসাধ্যই সাধন করতে হবে বরিশালকে। টুর্নামেন্টের আগের ১৪ ম্যাচের ২৮ ইনিংসে একবারও পেরোয়নি ১৮০ রানের দলীয় সংগ্রহ, ১৬০+ হয়েছে মাত্র ৬টি ইনিংস। আজ বরিশালের বিপক্ষে ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই এটি পেরিয়ে যায় রাজশাহী। পরে ১৬তম ওভারে ছাড়িয়ে যায় গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের করা সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের ইনিংসটি। মজার বিষয় হলো, রাজশাহীর বিপক্ষে ১৭৬ রান করেছিল চট্টগ্রাম। আজ নিজেরাই ছাড়িয়ে গেল সেটি।
বরিশালের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতের ম্যাচে রাজশাহী পুরো দল মিলে ৯ উইকেট হারিয়ে করেছিল মাত্র ১৩২ রান। আজ দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে শুধু উদ্বোধনী জুটিতেই এসেছে ১৩১ রান। বলা বাহুল্য, চলতি টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী জুটি তো বটেই, সবমিলিয়ে যেকোনো উইকেটেই এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। ইনিংসের ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ পয়েন্টে আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে আনিসুল ইমনের বিদায়ে ভাঙে ১৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
তবে সাজঘরে ফেরার আগেই নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলে যান ২৩ বছর বয়সী ইমন। মুখোমুখি চতুর্থ ও ইনিংসের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর সুমন খানের করা তৃতীয় ওভারে করেন বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক। ম্যাচের প্রথম ছক্কাও আসে ইমনের ব্যাট থেকে। মেহেদি হাসান মিরাজের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড লং দিয়ে হাঁকান বিশাল ছক্কা, পরের বলেই ওভারথ্রো থেকে আসে বাউন্ডারি, ৪ ওভারেই রাজশাহী করে ফেলে ৪০ রান।
আবু জায়েদ রাহী মাত্র ২ রান খরচ রানের গতি থামান। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আর রেহাই পাননি কামরুল ইসলাম রাব্বি। প্রথমে ছক্কার পর চার মারেন ইমন। তিনি সিঙ্গেল নিয়ে দেন শান্তকে। অধিনায়ক প্রথমে মারের চার, পরের বলেই বিশাল এক ছক্কা। যার সুবাদে ৬ ওভারে রাজশাহীর সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৬৪ রান। চলতি টুর্নামেন্টে পাওয়ার প্লে’তে এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
পাওয়ার প্লে’র পর ফিল্ডার ছড়িয়ে গেলেও থামেনি ইমন-শান্তর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ফিফটি পূরণের পর শতরান পেরুতে তাদের লাগে ৫৮ বল। এরই মাঝে মাত্র ২৫ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ের মারে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ইমন। শান্তর ফিফটি হয় ৩২ বল খেলে, ২ চারের সঙ্গে ৫টি বিশাল ছয়ের মারে।
ব্যক্তিগত মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলার পরেও থামার কোনো নিশানা ছিল দুই ওপেনারের ইনিংস। সুমন খানের করা ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই সোজা ছক্কা হাঁকান ইমন। তবে পরের বলে পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন আফিফের হাতে, থেমে যায় ইমনের ৭ চার ও ৩ ছয়ের মারে খেলা ৩৯ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। এরপরের গল্প পুরোটাই শান্তর সেঞ্চুরির। ইমন আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই চার মেরে নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার করে দেন শান্ত।
ঝড় বইয়ে দেন আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা পরের ওভারে, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও শেষ বলে হাঁকান তিনটি ছক্কা। তার দেখাদেখি সুমন খানের পরের ওভারে জোড়া ছক্কা মারেন তিন নম্বরে নামা রনি তালুকদারও। মাত্র ১৬ ওভারে ১৮০ রান করে ফেলে রাজশাহী। কিন্তু রান হয়নি পরের দুই ওভারে। মাত্র ৯ রান তুলতে ২টি উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা, ১৮ ওভারে দাঁড়ায় ১৮৯ রান। তখন ৫১ বলে ৯৬ রানের অপরাজিত রাজশাহী অধিনায়ক।
নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করতে তাসকিনের করা ১৯তম ওভারকেই বেছে নেন শান্ত। দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়েই ছক্কা হাঁকান ডিপ মিড উইকেট দিয়ে, পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। মাত্র ৫২ বলে ৪ চার ও ১০ ছক্কায় সেঞ্চুরি করেন শান্ত। তাসকিনের সেই ওভারে আরও ২ ছক্কায় আরও ২১ রান করে রাজশাহী।
শেষ ওভারে হয় আরেক নাটকীয়তা। সেই ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪টি উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। অন্য দুই বলে আবার ৪ ও ৬ মেরে ১০ রান তুলে নেয় রাজশাহী। শান্ত আউট হন ৪ চার ও ১১ ছয়ের মারে ৫৪ বলে ১০৯ রান করে। শেষ বলে ফজলে রাব্বির ছক্কায় রাজশাহীর ইনিংস থামে ২২০ রানে।
বরিশালের পক্ষে দেদারসে রান বিলিয়েছেন সবাই। শেষ ওভারে ৪ উইকেট পেলেও রাব্বি খরচ করেন ৪৯ রান। এছাড়া ২ উইকেট নেয়া সুমন খানের ৪ ওভারেও আসে ৪৩ রান।