ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। সম্প্রতি তেহরানে পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে হ্যাকার গ্রুপ।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিংয়ে (আইআরআইবি) সরাসরি সংবাদ সম্প্রচারের সময় হ্যাকার গ্রুপ এর দখল নেয়। এ সময় টেলিভিশনের পর্দায় সংবাদ বন্ধ হয়ে ভেসে ওঠে একটি মুখোশ।
ক্ষমতাসীনদের প্রতি অবজ্ঞা জানাতে এরপর পর্দায় দেখানো হয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি ছবি, যার চারপাশে আগুনের শিখা।
পর্দায় আলী খামেনির কপাল নিশানা করা হয়েছে বন্দুকের লিজারের আলো দিয়ে। খামেনির নিচে দেখা যাচ্ছে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনিসহ চলমান আন্দোলনে নিহত দুই তরুণীর ছবি।
হ্যাকিংয়ের কারণে ১২ সেকেন্ড আইআরআইবির পর্দা হ্যাকারদের দখলে থাকার পর ফিরে আসেন সংবাদ উপস্থাপক।
গ্রুপটি নিজেদের ‘আদালতে আলী’ বা ‘আলীর ন্যায়বিচার’ বলে পরিচয় দেয়।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহতে পরপর হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি ঘটে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিংয়ে (আইআরআইবি) সরাসরি সংবাদ সম্প্রচারের সময় পর্দায় ওঠে আসে হ্যাকারের মুখোশ। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিংয়ে (আইআরআইবি) সরাসরি সংবাদ সম্প্রচারের সময় পর্দায় ওঠে আসে হ্যাকারের মুখোশ। ছবি: সংগৃহীত
‘সঠিকভাবে’ হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়া মাহসা আমিনি এখন গোটা ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ হয়ে ওঠেছেন।
কুর্দি তরুণী মাহসাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের পশ্চিমাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব পরেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়ে মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। তার পরিবার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন শুরু থেকেই দাবি করছে, গ্রেপ্তারের সময় মাহসার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ। এ কারণেই পরে তিনি চেতনা হারিয়ে কোমায় চলে যান।
তবে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মাহসার মৃত্যুর কারণ ‘অসুস্থতাজনিত’।
মাহসার মৃত্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস গত ৭ অক্টোবর জানায়, বিক্ষোভে অন্তত ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক মানুষ।