এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে ইসরায়েলে গঠিত হয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার। আর এর মধ্যেই হাজারও ইসরায়েলি তাদের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।
মূলত নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন এই সরকারকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি বলে মনে করা হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার হাজার হাজার ইসরায়েলি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে বলে একজন এএফপি সংবাদদাতা জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর তেল আবিবে ‘গণতন্ত্র বিপদে’ এবং ‘ফ্যাসিবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য’-সহ নানা স্লোগান দেন।
এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ ইসরায়েলি এবং রংধনু পতাকা হাতে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে অন্যরা ‘ক্রাইম মিনিস্টার’ লেখা একটি বড় ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে হাজির হন। এটি (ক্রাইম মিনিস্টার) মূলত গত বছরগুলোতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি স্লোগান।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আস্থা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নেতানিয়াহু। আস্থা ভোটে পার্লামেন্টের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন নতুন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৫৪ জন।
নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এমন রাজনীতিবিদও রয়েছেন যিনি গত বছরের শেষের দিকে কর ফাঁকির কথা স্বীকার করেছিলেন। অতি-ডানপন্থি ওই রাজনীতিক একবার তার বাড়িতে এমন একজন ব্যক্তির প্রতিকৃতি রেখেছিলেন যিনি বহু ফিলিস্তিনি ইবাদাতকারীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন।
এ ছাড়া ৭৩ বছর বয়সী নেতানিয়াহু নিজেও আদালতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছেন এবং ইতোমধ্যেই তিনি ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস গড়েছেন।
নেতানিয়াহু এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি তৃতীয় মেয়াদে ইহুদি এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
শনিবার নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন আসাফ নামে এক আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘আমার দাদা-দাদি ইসরায়েলে এসেছিলেন এখানে ভালো কিছু গড়তে… আমরা অনুভব করতে চাই না যে আমাদের গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এএফপি বলছে, ইসরায়েলের ডানপন্থি নতুন এই সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের নীতি অনুসরণ করার এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্য ও সমর্থকদের উদ্বিগ্ন করে এমন কিছু সামাজিক সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা গত সপ্তাহে উন্মোচন করেছেন নতুন ইসরায়েলি বিচারমন্ত্রী। আর সেটি হলে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলোকে অগ্রাহ্য করার অনুমতি পাবে দেশটির পার্লামেন্ট।
ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ এই সংস্কার পরিকল্পনার নিন্দা করে টুইটারে বলেছেন, এটি ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পুরো আইনি ব্যবস্থাকে বিপন্ন করবে’।