একইসঙ্গে এগিয়ে আছে ‘বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামির কিছু নেতাদের গঠিত’ বলে পরিচিত এবি পার্টিও।নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন দৌড়ে এগিয়ে আছেন নুরুল হক নুরর গণ অধিকার পরিষদ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে অনানুষ্ঠানিক কমিশন বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, আজ কমিশনের অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, নতুন করে নিবন্ধন পেতে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। ওই আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করেছে। এতে তারা যে তথ্য দিয়েছিল, এই ৯৩টি আবেদনের মধ্যে ১৪টি আবেদন ছিল নির্দিষ্ট ফরমেটে ছিল না এবং দুটি আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ১৬টি আবেদন বাতিল হয়ে যায়। অবশিষ্ট ৭৭টির মধ্যে তাদেরকে আমাদের চাহিত কাগজপত্র ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলেছিলাম। ১৯টি দল ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে পারেনি।
এছাড়া পাঠানোর চিঠি দুটি দলের ঠিকানা ঠিক না থাকায় ফেরত এসেছে। ১০টি ১৫ দিনের পরে সময়ের আবেদন করেছিল। সেটা নামঞ্জুর করা হয়েছিল। এভাবে ৩১টি আবেদন পরবর্তীতে বাতিল হয়। সবশেষে থাকে ৪৪টি আবেদন।
এই ৪৪টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, নীতিমালা আইন এবং চাহিত তথ্যের সঙ্গে তারা যা দিয়েছেন তা পূরণ না করায় ১২টি দল টিকেছে, বাকিগুলো বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ মোট ৮১টি আবেদন বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে।
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, তারা যে তথ্য দিয়েছেন তা মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ১৫ দিনের মধ্যে জেলা-উপজেলা কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দেবেন। এরপর কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন।
দলগুলো- এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডি)।
নিবন্ধন কবে চূড়ান্ত হতে পারে, কারো সুপারিশে এই বাছাই হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি, আমাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে ১২টির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্যসংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এর কারণে সংশ্লিষ্ট দলের জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় অফিস আছে কিনা ইত্যাদি যাচাই করা হবে। আমরা বলেছি, ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, জুনের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আরও বলেন, যাচাই-বাছাইরে পর কয়টা টিকবে, কি টিকবে সেটা বলতে পারবো না। এখন উপজেলা পর্যায়ে ২শ ভোটারের সমর্থন থাকা লাগবে, এখন সেটা যাচাই করা হবে। এক-তৃতীয়াংশ জেলায় অফিস আছে কিনা সেই রিপোর্ট আসার পর সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
২৬ নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন পেতে আবেদন করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ইসি। এতে সময় সময় দেওয়া হয়েছিল ২৯ আগস্ট পর্যন্ত।
আরপিওতে নিবন্ধনের শর্ত:
(অ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা (আ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা (ই) দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, উহা যে নামেই অভিহিত হোন না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন ১শ’টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে, মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা ক্ষেত্রমত, থানায় অন্যূন ২শ ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ওই দলের অনুকূলে কমিশন ফরম-৩ এ একটি নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেবে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে।
সর্বশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। সময় দেওয়া হয়েছিল ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬ টি রাজনৈতিক দল। কেএম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।
এক এগার সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ে পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে এখন ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪০টি।