একটি ই-কমার্স সাইটে কোরবানির ঈদের জন্য গরু অর্ডার দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গরু পাননি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি গত কোরবানির ঈদের আগের কোরবানির ঈদে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করি। সেখানে নিজের কোরবানির জন্য একটি গরু কিনতে ১ লাখ টাকা দিই। কিন্তু আমাকে যে গরুটি দেখিয়েছিল, আমি সেটি পাইনি। পরে ৮৭ হাজার টাকার একটি গরু আমাকে দিতে চায় তারা। এজন্য বেশ কয়েক দিন ঘুরিয়েছিল। পরে বিরক্ত হয়ে আমি সেটা কোরবানি করে দুই ভাগ বিলি করে দিতে বলি। আর একভাগ মাংস আমাকে পাঠাতে বলি। আর বাকি টাকার জন্য একটি ছাগল পাঠায় তারা।’
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তার এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন কমিশনের সদস্য ড. এ এফ এম মনজুর কাদের, নাসরিন বেগম, জি এম সালেহ উদ্দিন; ইআরএফের সভাপতি শারমীন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ। ই-কমার্সের শুরুতে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল, পরে তা সংশোধন হয়েছে উল্লেখ করে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি জিনিস নতুন করে চালু করলে সেটা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তার ভুক্তভোগী আমি নিজেই। মন্ত্রী হয়ে আমার সঙ্গেই যদি এমন করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি সম্পর্কে টিপু মুনশি বলেন, আমি ব্যবসায়ী ৪০ বছর আর রাজনীতিবিদ ৫৬ বছর। মানুষের জন্যই আমি রাজনীতিতে এসেছি। ব্যবসায়ীদের চেয়ে মানুষের প্রতি আমার টান অনেক বেশি। লাখ লাখ কোম্পানির মতোই ইভ্যালি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক (আরজেএসসি) থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করছে। ইভ্যালি প্রচার প্রোপাগান্ডায় কী পরিমাণ খরচ করেছে আপনারা দেখেছেন। তাদের প্রচারণা ব্যয় থেকেই বোঝা যায় তারা কী করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনে আরো অবাক হবেন ই-অরেঞ্জ তো নিবন্ধনও নেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা করেছে কেবল ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে। এদের বিরুদ্ধে বর্তমান আইনের ৪২০ ধারায় মামলা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতে কী লাভ হবে? কয়েক দিন পরে তারা জামিন নিয়ে চলে যাবে। তাই আইন পরিবর্তন করতে হবে।’
ই-কমার্সের সমস্যা সমাধানে সবাই মিলে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া আরো কঠোর করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি আইন পরিবর্তন করে ই-কমার্স খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার। এই তিন-চারটি কিংবা ১৫-২০টি কোম্পানির জন্য ই-কমার্স খাতকে বিপদে ফেলতে চাই না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ই-কমার্স সম্পর্কে মানুষের পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ জন্য মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাংবাদিকরা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসত্ উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করেছে, সেগুলোর অনেক সম্পদ আছে। যুবক ও ডেসটিনির কথা শুনেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে, তাহলে ৫০-৬০ শতাংশ মানুষের টাকা পরিশোধ হবে। কিন্তু সেটা আমি চাইলে তো হবে না। আইনমন্ত্রীর সহযোগিতা লাগবে। মন্ত্রীকে বলেছি, তিনি বলেন, এটা আদালতের ব্যাপার। আইনের ঝামেলা মেটাতে আদালতের রায় পেতে হবে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, ইভ্যালিসহ এসব প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দিলে ফল ভালো হবে না। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন মন্ত্রণালয়ের সাহায্য দরকার। কারণ, বর্তমান আইন পরিবর্তন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মফিজুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। মামলাটি আদালতে চলমান আছে। শিগিগরই রায় হবে। বাংলাদেশে সম্প্রতি একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ। বিভিন্ন ধরনের অফার এবং দ্রুত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে