আবু তাহে বাপ্পা : রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মনোরম ক্যাম্পাস আর সহজ যোগযোগের কারণে এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়। ৮ হাজারের বেশী ছাত্র ছাত্রীর পবিত্র এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা সময়ে দূর্নীতি স্বজন প্রীতিসহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে এ মুহুর্তে আলোচনায় আছেন একজন তরিকুল আজম খান। বাংলা সিনেমার হিরোর মতো যার উত্থান। বলা চলে ৮ হাজারের বেশী ছাত্র ছাত্রীদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের এখন তিনি অঘোষিত নিয়ন্ত্রক। তার ঈশারায় ও নির্দেশনায় চলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক কিছু। এর কারণ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন আইন মানেনি এই তরিকুল আযম খান। আর যতবার তিনি আইন ভেঙ্গেছেন ততবারই কোন না কোন উপায়ে বাগিয়ে নিয়েছেন প্রমোশন বা আরো বেশী কিছু।
এত প্রাপ্তিতে অনেকটাই বেপরোয়া তরিকুল আযম খান । ছাত্র পিটিয়ে চরম আহত করা, শিক্ষিকাকে সরাসরি নির্যাতন করাসহ বহু অনাকাঙ্খিত ঘটনার নায়ক তিনি। দেশের বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সকল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথে নিয়ন্ত্রকের ভ’মিকায় বসে আছে এই তরিকুল আযম খান। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর, মাউশি, বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব সুপারিশ অকার্যকর তার কাছে।
তরিকুল আযম খানের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় বেকার,অসহায় ও খানিকটা বখাটে তরিকুল ইসলাম স্কুল কমিটির সাথে যুক্ত স্থানীয় এক নেতার আর্শিবাদে ক্যানটিন ম্যানেজার হিসেবে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে প্রবেশের অধিকার অর্জন করে। ক্যাম্পাসে ঢোকার পরই যে যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। ক্যানটিন ম্যানেজারির পাশাপাশি সে সংশ্লিষ্টদের মনোরঞ্জনে মনোনিবেশ করে। শুরু করে তোষামোদি। সেই সাথে পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টদের মনোরঞ্জনে যাবতীয় সরবরাহ চেইন গড়ে তোলে সে। কিছুদিন পর ক্যান্টিন ম্যানেজারের পদ থেকে পরিচালনা পর্ষদ তরিকুল আযম খানকে কেয়ার টেকার হিসেবে নিয়োগ দেয়। ব্যস তিনি হয়ে ওঠেন ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রক।
এ দিকে তার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা ও বিভিন্ন অপরাধ ও দূর্নীতিতে জড়িয়েপড়ায় তাকে ঘিরে দেখা দেয় আইনী জটিলতা। সে জটিলতা কাটাতে তার মনোরঞ্জন প্রক্রিয়ায় অতিশয় সন্তুষ্ট ও খুশি পরিচালণা পর্ষদের ক্ষমতাধর ব্যক্তিগণ তাকে মানবিক কারণ দেখিয়ে স্কুলের সহকারি শিক্ষক হিসেবে অধিভ’ক্ত করেন। যা ছিলো আইনের চরম লঙ্ঘন। প্রাতিষ্ঠানিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুযায়ী সরকারি অধিভ’ক্ত কোন প্রতিষ্ঠানে মানবিক কারণে কাউকে চাকুরি দেয়ার সুযোগ নেই। আর মাত্র কিছুদিন আগে তৃতীয় শ্রেণীর একজন ক্যান্টিন ম্যানেজার পরে কেয়ার টেকার কোন নৈতিকতায় সহকারি শিক্ষকের পদ পেয়ে বসে সে প্রশ্নে লজ্জায় মুখ লুকাতে বাধ্য হয় দেশের সব আইন ও নৈতিকতা। সবচেয়ে বড় কথা তরিকুল আযম খানেক যে কমিটি সহকারি শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করে চিঠি ইস্যু করে সে কমিটিও ছিলো এডহক। তাদের বৈধতা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে তরিকুল আযম খানের নিয়োগ আইনের চরম লঙঘনই শুধু নয়, দেশের আইন রীতি নীতির সাথে চরম উপহাস হিসেবে মনে করেন প্রতিষ্ঠানে সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, অভিভাবকদের অনেকেই। অবাক করার বিষয় হচ্ছে এই ক্যান্টিন ম্যানেজার তরিকুল আযম খান এখন শুধু শিক্ষকের সুবিধা নিচ্ছেন তা নয়, একই সাথে সে নিজেকে স্কুলের কো -অর্ডিনেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত পয়সা নিচ্ছে।
এ দিকে তরিকুল আযম খানের সকল নিযোগ প্রক্রিয়ার প্রমানপত্র নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোতে তরিকুল আযম খানের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ নেই। সেই সাথে মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী তার যে টেবুলেশন সিট সেখানে নাম্বারের ঘর ফাকা রেখেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেখানে ডিজির কোন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
এ সংক্রান্ত জেলা শিক্ষ কার্যালয় কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনের স্মারক নং ৩৭/ক/স্বী/ ৯৯(অংশ -০১) /৮৮৬, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পত্র নং ৩৭.০০.০০০০.০৭২.৩৯.০১৭.২২০ তারিখ ১৮/০৯/২০১৮ স্মারকে এসব প্রমাণ রয়েছে।
এ দিকে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র নাহিয়ানকে বেদম পিটিয়ে আহত করার মামলায় সে অন্যতম আসামী। নাহিয়ানের বাবার দায়ের করা মামলা নং সিআর ১১৮/২০২৩ রমনা মডেল থানা, তারিখ ২২/০২/২০২৩, ধারা শিশু আইন ২০১৩ এর ধারা ৭০। এ ছাড়া শিক্ষিকা নিগার শারমিনকে শারীরিক ও মানসিক নির্য়াতের অন্যতম আসামী তরিকুল আযম খান। শিক্ষিকা নিগার শারমিনের দায়ের করা মামলা নং ২, ধারা ৩২৩/৩৪১/৩৪২/৩৭৯/৫০৬/৩৪, ।
এতসব অপরাধ করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অজানা শক্তির কারণে টিকে যাওয়ায় তরিকুল আযম খান এখন চরম বেপরোয়া। এ সব বিষয়ে জানতে তরিকুল আযম খানের কাছে ফোন করলে তিনি দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিকে জানান, এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সে কোন অপরাধ করেনি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি কোন গড়মিল থাকে সে দায় তার না। সেটা নিয়োগ দাতা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আর মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আদালতে বিচারধীন বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।
এই প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম বা দুর্নীতি নিয়ে কথা বললেই তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয় । এমন কি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মত ঘটনা ঘটেছে এখানে। নাজমা হোসেন লাকি ইংরেজি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা অধিদপ্তরে অনিয়মের অভিযোগ করায়, বরখাস্ত করা হয় এই শিক্ষিকাকে । পাঁচ বছর পরে কর্মস্থলে যোগ দিতে পেরেছেন তিনি। নাজমা ইসলাম লাকির দাবি এখনই সময় এই প্রতিষ্ঠানকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করার।