চট্টগ্রাম শহরে ২৪ ঘণ্টা ওয়াসার নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত হতে যাচ্ছে। দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এখন উৎপাদিত পানির গুণগত মান পরীক্ষা (প্রকল্পের ট্রায়াল রান চলছে) করা হচ্ছে।
আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা। এ লক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন।
তারা প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সরেজমিন দেখবেন এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে সার্বিক বিষয়ে ধারণা নেবেন। এরপর মন্ত্রী ওয়াসার ‘পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশন’ উদ্বোধন করবেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ বুস্টিং পাম্প চালু হলে ইপিজেড-বন্দর-পতেঙ্গাবাসী মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পে উৎপাদিত দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানি পাবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরও ১৪ দশমিক ৩ কোটি লিটার। বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্প চালু হলে দৈনিক ৫০ কোটি লিটারের বেশি পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে প্রথম প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প চালুর পর এ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্প। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করে।
নগরীতে বর্তমানে ওয়াসার পানির চাহিদা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার কিন্তু ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে প্রায় ৩৬ কোটি লিটার। এ শোধনাগার চালু হলে উৎপাদন বাড়বে আরও ১৪ দশমিক ৩ কোটি লিটার। এতে নগরীর পানি সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।
২০২০ সালের জুনে এটি চালু হওয়ার প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। পরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজের যোগ দিলে কাজে গতি আসে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এ প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ট্রায়াল রান চলছে। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা কারিগরি দিকগুলো দেখছেন। শনিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ এ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন। তাদের সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে আগামী ১৭ মার্চ প্রকল্পটি উদ্বোধন হতে পারে। এটি হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে চট্টগ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় উপহার। পাশাপাশি নগরীর সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজও এদিন উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন, এ প্রকল্প চালু হলে নগরীতে আর পানির সংকট থাকবে না। অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত নগরীতে পানির জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। পানি সরবরাহের দিক থেকে বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর মতো সেবা মিলবে। এরপর সমস্ত গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল বাড়বে। ফলে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হবে। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরে এ প্রকল্পের ট্রায়াল রান চালাচ্ছি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, উৎপাদিত পানির গুণগত মান নিশ্চিত করা। প্রতিটি প্যারামিটারে শতভাগ লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা পর্যন্ত কোনোভাবে সাধারণের ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ করা যাবে না। আমরা এ লক্ষ্যে চূড়ান্ত পারফেকশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।