ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৭৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত সাত মাসের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। একদিনের ব্যবধানেই দ্বিগুণের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
একই সময়ে আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন কেরালার বাসিন্দা, একজন রাজস্থান এবং একজন কর্ণাটকের বাসিন্দা। একদিন আগেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২৮ এবং মারা গেছে একজন। এর মধ্যে ২৬৫ জনই ছিল কেরালার বাসিন্দা। মৃত্যুর ঘটনাও ওই একই রাজ্যেই।
ভারতে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪২০ জনে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৯৭ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একদিনেই সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪২৩ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২২ জন করোনা রোগীর শরীরে জেএন.১ উপ-ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা বৃদ্ধি পেয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং গুজরাটে। করোনার বিষয়ে সতর্ক হতে রাজ্যগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতি রাজ্যে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও করোনা ঠেকাতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
রাজস্থান, কর্নাটক, বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে স্বাস্থ্য দফতর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। তবে এখনই নতুন করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা বা ঘুরতে যাওয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করার মতো কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় চীনে। এরপরেই তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩২। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৭ হাজার ৯৬৪ জন।
শুধু ভারতেই নয়, গত চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এই সময় নতুন করে সাড়ে আট লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
আক্রান্তের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গত চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় আট শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে মারা গেছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যউপাত্ত অনুসারে, জেএন.১’র কারণে এই মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি।