বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাস মহামারীতে পর্যুদস্ত তখন এত কোটিপতি তৈরি হতেও এর আগে দেখা যায়নি। গত বছরে এত বেশি সম্পদ হস্তগত হয়েছে যা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কোটিপতির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে চীন, তারপর যুক্তরাষ্ট্র। হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্টে দেখা গেছে গত বছর চীনে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৮ জন যা যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৬৯৬ জন। বিশ্বে গত বছর ৬১০ জন নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে চীনে হয়েছে ৩১৮ জন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯৫ জন। গত জানুয়ারিতে ১৫টি আর্থিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সারাবিশ্বে যত কোটিপতি তৈরি হয়েছে তারচেয়ে বেশি হয়েছে চীনে। একই সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে দর কষাকষির মধ্যে কোটিপতি সৃষ্টিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে গেছে। বিশ্বে যে ১০টি শহর কোটিপতির আস্তানা হিসেবে পরিচিত তার মধ্যে ৬টি হচ্ছে চীনের। বেইজিং এসব শহরের মধ্যে টানা ষষ্ঠবারের মত শীর্ষে অবস্থান করছে। বেইজিংয়ে এখন ১৪৫ জন কোটিপতি বাস করছেন যাদের ‘আল্ট্রা রিচ’ বলে অভিহিত করা হয়। আদতে শহরটি কোটিপতিদের রাজধানীতে পরিণত হয়ছে। তৃতীয় স্থানে নিউইয়র্ক নেমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সাংহাইতে ৩০ জন কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৩ জনে। পঞ্চম স্থানে থাকা হংকংয়ে আছে ৮২ জন কোটিপতি আর এর আগের স্থানে থাকা শেনঝান শহরে রয়েছে ১০৫ জন কোটিপতি।
হুরুন গ্লোবাল রিচের চেয়ারম্যান ও প্রধান গবেষক রুপার্ট হুগেওয়ের্ফ বলছেন বিশ্ব কখনো এমন মহামারীর বছরে কোটিপতির সংখ্যা বাড়তে দেখেনি। স্টক মার্কেট বুম ছাড়াও অন্যান্য অনুকূল পরিবেশে গত বছর প্রতি সপ্তাহে বিশ্বে ৮ জন কোটিপতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ১২ জন মার্কিন কোটিপতির কাছে সম্পদের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। যা বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ার মোট জিডিপি’র বেশি। অথচ গত বছর বিশ্ব ভুগেছে কোভিড ভাইরাসে, চরম অর্থনৈতিক সংকটে। গবেষণা আরো বলছে গত বছর মিলিত সম্পদের পরিমান শূন্য দশমিক ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২ শতাংশে। যা অর্থের পরিমান ১৪.৭ ট্রিলিয়ন।
৬৮টি দেশে একই সময়ে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ২২৮ জন যাদের কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৪০২টি। কোভিড ভাইরাস স্বাস্থ্যখাত ও খুচরা ব্যবসায় কোটিপতি তৈরিতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলতে গেলে মুনাফা লুটেছেন। তিন জন কোটিপতি গত বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কামিয়েছেন। এদের সম্পদ সৃষ্টির গতি বিস্ময়কর! মার্কিন শীর্ষ কোটিপতি এলন মাস্ক একাই কামিয়েছেন ১৫১ বিলিয়ন ডলার। ই-কমার্স ব্যবসায়ী জেফ বেজোস ও কলিন হুয়াং কামিয়েছেন ৫০ বিলিয়ন ডলার করে। আগামী ৫ বছরে সম্পদ সৃষ্টি এ হার অব্যাহত থাকলে তাদের অনেকেই ১শ বিলিয়ন ডলার কামাবেন অনায়াসে।