নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ অবৈধভাবে ৯১১টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়াও আদায় করেছে সিটি করপোরেশন। এখন এসব দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ঐ মার্কেটের গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত, সিঁড়ি, গলি, টয়লেট, লিফটের জায়গায় নকশাবহির্ভূত এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ আইন অনুযায়ী পার্কিং বা নকশাবহির্ভূত স্থানে অন্য কিছু নির্মাণের বিধান নেই। এছাড়া এসব অবৈধ দোকানের কারণে মার্কেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবৈধ দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে উঠেছে। এসব অনিয়ম বন্ধ করতেই অবৈধ দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে অবৈধ দোকানের ব্যবসায়ীরা জানান, যারা এই ৯১১টি দোকান নির্মাণ করেছেন, তারা এখানে ব্যবসা করেন না। তারা অধিকাংশ দোকান কম দামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ দোকান ভাড়ায় চালাচ্ছেন। এখন সিটি করপোরেশন দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দিলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘ডিএসসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান, এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ এবং তানজিলা কবির ত্রপার নেতৃত্বে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর ব্লক-এ, ব্লক-বি এবং ব্লক-সি’তে অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নোটিশ এবং মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী আজ (সোমবার) রাতের মধ্যে মালামাল না সরালে দোকানসহ তা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।’
ডিএসসিসি সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ডিএসসিসির যেসব ভবনে পার্কিংয়ের জায়গায় দোকানপাট রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদে নির্দেশনা দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সুপারিশ করে ডিএসসিসির একটি তদন্ত কমিটি। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই এসব দোকান থেকে একসঙ্গে সাত বছর দুই মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তখন এই খাতে কয়েক কোটি টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছিল। ঐ মার্কেটের তিনটি ব্লকে বৈধ দোকান প্রায় তিন হাজার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দে ডিএসসিসির সম্পত্তি ও রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে ঐ মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীও রয়েছেন। তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম ঠেকাতে কয়েক দফায় মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে মোটা অংকের টাকার তহবিল গঠন করেছেন। কিন্তু এবার আর রক্ষা নেই।’
এই অবৈধ দোকানগুলো পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘অবৈধ দোকান উচ্ছেদের নোটিশ শনিবার হাতে পেয়েছি। এই নোটিশে মাত্র তিন দিনের সময় দেয়া হয়েছে। ঐ সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবসায়ীই মালামাল সরায়নি। তারা আরও একমাস সময় চাইছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবশেষ গত মাসের ভাড়াও সিটি করপোরেশনকে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় তাদের উচ্ছেদ করলে পথে বসতে হবে। তাই উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসন করা জরুরি।’