বিতর্কিত হওয়ায় নরসিংদীর রায়পুরার অলিপুরায় দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়ার একদিনের মাথায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তার প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম ওবায়দুল হক বাবলু এবার দলের মনোনয়ন দেয় দলটি। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ ও আপত্তির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানকার প্রার্থিতা পরিবর্তন করে দলটি। নতুন করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান আলামিন ভুইয়া মাসুদকে। এরপরও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আলামিন ভুইয়া মাসুদ রায়পুরা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। একই সাথে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সু-সময়ে দলে অনুপ্রবেশকারী এই সাবেক ছাত্রদল নেতাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার মাঝি হিসেবে মেনে নিতে চাইছেন না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ ওই এলাকা ও এলাকার বাইরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ১০ ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার ২টিসহ মোট ১২ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সবকটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অলিপুরা ইউপিতে তৃণমূলের বর্ধিত সভার মাধ্যমে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। তারা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন ভুইয়া মাসুদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল হক, চারবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আলী আহমেদ দুলু এবং উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক খন্দকার কবির হোসেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, রায়পুরার অলিপুরায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল হক বাবলুকে প্রথমে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিতর্ক তৈরি হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে তার মনোনয়ন বদল করে বর্তমান চেয়ারম্যান আল আমিন ভুইয়া মাসুদকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। বর্তমানে আল আমিন ভুইয়া মাসুদকে নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ একসময় তিনি রায়পুরা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। একই সাথে বিএনপির রাজনিতিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সু-সময়ে দলে অনুপ্রবেশকারী এই সাবেক ছাত্রদল নেতাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার মাঝি হিসেবে মেনে নিতে চাইছেন না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ ওই এলাকা ও এলাকার বাইরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে প্রথমে মনোনয়ন পাওয়া ওবায়দুল হক বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলাম না। নেতাকর্মীদের অনুরোধে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও আমার প্রতীকে কিছু ভোট পড়েছিল। এই বিষয়টিকে পুঁজি করেই আমার প্রতিপক্ষরা আমার মনোনয়নের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। তবে এখন যাকে মনোনয়ন দেওয়া হল তিনি আওয়ামী লীগের একজন অনুপ্রবেশকারী হিসেবে পরিচিত। এমন সিদ্ধান্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কষ্ট পেয়েছে।’
পুনরায় মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান আল আমিন ভুইয়া মাসুদ জানান, ‘তৃণমূল থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিল। তবুও কেন একজন বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আমি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি।’ তবে ছাত্রদলের কমিটিতে নাম থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের সত্যতা নিশ্চিত করে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন জানান, ‘দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ায় ওবায়দুল হকের মনোনয়ন পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আপিল কমিটি যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন বাতিল এবং প্রদানের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। এ ব্যাপারে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’