‘এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
আইএমইডি বলেছে, সড়ক নির্মাণে ঝামা ইটের (পুড়ে কালো হওয়া) খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এই মহাসড়ক টেকসই হবে না। সড়কে দ্রুত ভালো ইটের খোয়া ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএমইডি গত ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদন এরইমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
আইএমইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য সংগৃহীত স্টোন চিফস ও ইটের খোয়াও ভালোভাবে ভাঙা হয়নি। সেগুলো ভালোভাবে ভাঙার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। এ বছরই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যয় বাড়ানোসহ ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। ব্যয় ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা বাড়ানোর ফলে এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মোট আর্থিক অগ্রগতি ১৯ দশমিক ১ শতাংশ আর বাস্তব অগ্রগতি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে আইএমইডি।
ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) লক্ষ্য অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় সরকারের অনেক সময় ও অর্থের অপচয় হয়েছে। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে হলে ঠিকাদারকে জনবল ও নির্মাণ সামগ্রীর মোবিলাইজেশন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
আইএমইডি দেখতে পেয়েছে, সড়ক থেকে এখনো বৈদ্যুতিক খুঁটি, পানির লাইন ও গ্যাস লাইন সরানো হয়নি। আইএমইডি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, প্রকল্পে কোনো ধরনের ঝামা ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়নি।
কাজের অগ্রগতি কম হওয়া প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব হয়। মেশিনারিজ আমদানির কাজও ব্যহত হয়। রংপুর অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি, করোনা ও বন্যার কারণে প্রকল্পের কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি।
আইএমইডি রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আইএমইডিকে প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছি। আইএমইডি কর্মকর্তারা সাইটে গিয়ে কিছু পোড়া ইট দেখেছেন। কিন্তু আমরা সেসব সড়কে ব্যবহার করিনি। পোড়া ইটের মধ্যেও কিছু ভালো ইট পাওয়া যায়।
ইউটিলিটি স্থানান্তরে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউটিলিটি স্থানান্তর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও কাজের গতি ভালো না। প্রকল্পের ধীরগতি প্রসঙ্গে পিডি বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের গতি খারাপ হয়েছে। তবে আশা করছি সামনের এপ্রিল মাসের প্রকল্পের ভালো একটা অগ্রগতি দেখা যাবে। সাইটে আগের মতো কাজ শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার প্রসারসহ ভারত-নেপালের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে চার লেন হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়ক। রংপুর মহাসড়ক থেকে বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি।
৭টি নির্মাণ প্যাকেজের আওতায় সড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি সেতু, ৪১১ মিটারের একটা রেলওয়ে ওভারপাস ও ১১টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এলেঙ্গায় ১ হাজার ৫৩৮ মিটার, কড্ডার মোড়ে ৩৯৬ মিটার ও গোবিন্দগঞ্জে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ইপিজেড ও গোবিন্দগঞ্জ পলাশবাড়ী এলাকায় নতুন করে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ যোগ হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ। এই সড়কের মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডোরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রকল্পের আওতায় রুটের উভয়পাশে স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) লেন নির্মাণ করা হবে। ১৯০ কিলোমিটার রুটের যেখানে যানজট বেশি এমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৬৩৫ মিটার।