আজ ৩১ জুলাই, ২০২২ রোজ রবিবার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনাতন হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের মানদন্ড নিয়ে ওকলাও ওপেন সিগনালের প্রতিবেদন এর প্রক্রিয়া ও বৈধতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর আমরা দেখেছি ওকলা প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিশে^ সেবার মানদণ্ডে পিছিয়ে পড়া দেশ। যা ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১৩৭তম। আপনারা জানেন, গত ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর গ্রামীণ ফোনের সেবার মান সর্বনিম্ন ঘোষণা দিয়ে সরকার গ্রামীণ ফোনের নতুন করে সীম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। মজার ব্যাপার দু’দিন আগে আমরা দেখলাম হংকংয়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
যেখানে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংককে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আমাদের প্রশ্ন বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এই সার্টিফিকেট আনতে কিভাবে কতটাকা প্রদান করা হয়েছে এবং গ্রাহকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত না করে সরকারের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জবাবদিহীতার বাইরে থেকে এই ধরনের একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করল প্রতিষ্ঠানটি তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই, এই সকল প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহীতার আওতায় এনে গ্রাহকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে তা সরকারকে দেখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উপদেষ্টা প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, এই সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন প্রদানের মানদণ্ড সঠিক নয়। তারা কখনোই ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ফেসবুক ইউটিউব কখনো গ্রাহকের তথ্য অন্যের কাছে হস্তান্তর করে না। তাই তারা গ্রাহকের ডিভাইসে প্রবেশ করে যদি স্যাম্পল সংগ্রহ করে থাকে তাহলে তা হবে ডাটা প্রাইভেসি লংঘন এবং আইনত অপরাধ। সরকারকে বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে চলবে না। তিনি আরো বলেন, বিটিএস টাওয়ারগুলিতে ম্যালওয়ারের মাধ্যমে এসকল প্রতিষ্ঠান বিদেশে বসে তথ্য সংগ্রহ করছে কিনা সেটিও তদন্তে দেখা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ, আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু বক্কর সিদ্দিক, কেন্দ্রীয় সদস্য এড. সাহেদা বেগম ও মিতা রহমান, প্রচার সম্পাদক শেখ ফরিদ, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়:-
- বিশ্বব্যাপি প্রচুর এপ্লিকেশন রয়েছে যার মাধ্যমে মোবাইল সেবার মান পর্যালোচনা করা যায় এবং তারা অনেক র্যাঙ্কিং করে থাকে, তবে এসব আ্যপ তাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা কখনই পায়নি-
- উপরে উল্লেখিত আ্যপ ছাড়াও আরো বহু আ্যপ রয়েছে
- এ সকল আ্যপ তাদের কার্যক্রম বাণিজ্যিক স্বার্থে করে থাকে। কারণ তারা তাদের নানা রকম প্রোডাক্ট ও বিশ্লেষণ মোবাইল অপারেটর, বিশ্লেষক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে থাকে। অর্থাৎ তাদের এরূপ রিপোর্ট স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত।
গত বছর ওকলার রিপোর্ট নিয়ে বিটিআরসির মতামত
ওপেন সিগন্যাল মোবাইল এক্সপেরিয়েন্স রিপোর্টের সীমাবদ্ধতাসমূহ
- ডিভাইস চিপসেট:ডিভাইস চিপসেটের সাথে গতির অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য ব্যবহার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা পরিবর্তিত হয়
- গ্রাহকের তথ্য বা স্যাম্পলের আকার :শুধুমাত্র অল্প কিছু গ্রাহকের তথ্য বা স্যাম্পল নিয়ে এই রিপোর্ট করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।যেহেতু বাংলাদেশে এই গতি পরিমাপক অ্যাপেরব্যবহার তেমন জনপ্রিয় নয়।এছাড়া ওপেনসিগন্যাল তাদের রিপোর্টার কোথাও কতটি স্যাম্পল তথ্য ব্যবহার করেছে তার কোন উল্লেখ করে নি এবং তাদের সর্বনিম্ন কতটি স্যাম্পল হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে তারও কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ পাওয়া যায় নি।
- প্রযুক্তি:বাংলাদেশে বর্তমানে ২জি, ৩জি ও ৪জি তিনটি প্রযুক্তির মোবাইল সেবা চলমান।কাজেই স্যাম্পল ড্যাটার কতটুকু কোন প্রযুক্তিতে হয়েছে, তা চূড়ান্ত ফলাফলকে প্রভাবিত করবে। কাজেই এই বিষয়ের স্বাভাবিকরণের কোন উল্লেখ কোথাও নেই।
- সার্বিক দেশব্যাপী স্থানের সমবন্টন:দেশব্যাপী কোন একটি রিপোর্টকে গ্রহণযোগ্য তখনই বলা যায়, যখন সার্বিক দেশব্যাপী স্থানের সমবন্টিত তথ্যের ভিত্তিতে কোন বিশ্লেষণ করা হয়। ওপেন সিগন্যালের এই রিপোর্টে সমবন্টনের কোন চিত্র লক্ষ্য করা যায় নি।
- নেটওয়ার্কের অন্যান্য প্যারামিটার:মোবাইল ইন্টারনেট সেবার গতি পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রতি মোবাইল ডিভাইস এর গড় নিয়ে সার্বিক গড়ের মাধ্যমে গতির ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ডিভাইসের মান, স্পিড টেস্টের সময় নেটওয়ার্কে সংশ্লিষ্ট সকল প্যারামিটার যেমন ব্যবহারকারীর সংখ্যা, সাইট হতে ব্যবহারকারীর দূরত্ব, টেস্টিং সার্ভারের দূরত্ব ইত্যাদি বিষয় খুব সহজেই ফলাফলকে প্রভাবিত করে। ওপেন সিগন্যাল তার রিপোর্টে এই বিষয়গুলি কিভাবে বিবেচনা করেছে তার কোন উল্লেখ নেই।
- পরিমাপক স্কেল : ওপেন সিগন্যাল তার রিপোর্টে ভিডিও, গেমিং, ইন্টারনেট ভয়েস কল, ৪জি কাভারেজ ইত্যাদির যে পরিমাপক স্কেল ১-১০ বা ১-১০০ এ পরিমাপ করা হয়েছে তার পদ্ধতিও সুস্পষ্ট নয়।
- স্মার্টফোন ব্যবহারকারী: আমরা জানি যে বর্তমান মোবাইল অপারেটরের মধ্যে এক এক অপারেটরের গ্রাহকদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক এক রকম। কাজেই এই সার্বিক প্যারামিটার গুলোর ফলাফলও এর কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
- আইফোন হতে ওপেন সিগন্যাল সিগন্যালের ড্যাটা সঠিকভাবে নিতে পারে না যেহেতু আইওএস ওপেনসিগন্যালকে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল সংক্রান্ত ড্যাটা এক্সেস করতে দেয় না। ফলে ওপেনসিগন্যাল ড্যাটা অনুমানের ভিত্তিতে করে থাকে যা মূল ফলাফলকে প্রভাবিত করে।
সার্বিক বিবেচনায় ওপেন সিগন্যালের এই রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয় এবং এই রিপোর্ট দেখে গ্রাহকদের সেবা ব্যবহারের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রতীয়মান হয়। কাজেই গ্রাহকরা যাতে প্রভাবিত না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করা জুরুরি।
- গ্রাহকের তথ্য বা স্যাম্পলের আকার যে খুবই কমতা এখানে সুস্পষ্ট
- গুগল সার্চ থেকে দেখা যায় ওপেন সিগন্যাল তাদের একটি রিপোর্টে মাত্র এয়ারটেল – ৮৫৩ জন, রবি – ১৪০৩ জন , গ্রামীণফোন- ২৮৮১ জন এবং বাংলালিংক- ১৭৩২ জন গ্রাহক এর তথ্যের উপর বিশ্লেষণ রিপোর্ট করেছে।
ওপেন সিগন্যাল কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট এবং মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশান এর বক্তব্যঃ
- গ্রামীন ফোনের সেবার মান, কলড্রপ ও গ্রাহকের ভোগান্তি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই।
- তাদের সেবার মানের কারনে শেষ পর্যন্ত বিটিআরসি গ্রামীনফোনের সিম বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
- অথচ এই রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামীণ ফোন কেরাঙ্কিং প্রথম বলছে যা অসঙ্গত, কারণ আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তাদেরকে তাদের নিম্নমানের সেবার জন্য গ্রাহক বৃদ্ধিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
- আমরা জানতে পেরেছি, গ্রামীনফোন এই সিম বিক্রি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার জন্য তারা বিভিন্নভাবে লবি করার চেষ্টা করছে।
- ওপেন সিগন্যাল শুধুমাত্র তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে।বাংলাদেশের খুবই অল্প সংখ্যক গ্রাহক এই অ্যাপ ব্যবহার করে।আর বাংলাদেশের শহর এলাকা ব্যতীত অন্যান্য জেলার বেশিরভাগ মানুষই এই ওপেন সিগনাল অ্যাপ ব্যবহার করে না।অর্থাৎওপেন সিগনালের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের সেবার মান উঠে আসে না।
- যেখানে বাংলাদেশে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৮.৫ কোটি, সেখানে শুধুমাত্র অল্পকিছু গ্রাহকের তথ্য বা স্যাম্পল নিয়ে এই ধরনের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা গ্রাহককে বিভ্রান্ত করছে।
- এই ধরনের রিপোর্ট আরো গ্রহণযোগ্য নয়কারণ বিটিআরসি ২০২১ এর মার্চে নতুন তরঙ্গ দেয়ার পর গত ৬-৭ মাসে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান যাচাই এর জন্য যতগুলো ড্রাইভ টেস্ট এর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেই রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, গ্রামীনফোনের সেবার মান অন্য সকল অপারেটরদের থেকে খারাপ।
- বিটিআরসি কর্তৃক প্রকাশিত ড্রাইভ টেস্টের রিপোর্ট:
এলাকা |
সেবার মাপকাঠি |
গ্রামীনফোন |
রবি |
বাংলালিংক |
টেলিটক |
|
|
রাজশাহী |
৪জি ডাউনলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৪.৪৫ |
৬.২৮ |
৭.০৫ |
২.৫৮ |
|
|
৪জি আপলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৮.৯ |
১০.৩৩ |
১০.৭৬ |
৩.৯ |
|
|
রংপুর |
৪জি ডাউনলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৫.০৬ |
৮.৩৬ |
৬.৮২ |
২.৪৮ |
|
|
৪জি আপলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
১০.৬২ |
১২.৭১ |
১১.২৪ |
৪.০২ |
|
|
বরিশাল |
৪জি ডাউনলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৫.০৫ |
৬.৮৭ |
৫.৬৮ |
২.২৭ |
|
|
৪জি আপলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৯.৫২ |
১১.৪ |
৮.৭৭ |
৪.৭৭ |
|
|
খুলনা |
৪জি ডাউনলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৫.০৬ |
৩.৩২ |
৪.৫৯ |
১.৭১ |
|
|
৪জি আপলোড স্পীড (এমবিপিএস) |
৮.৫৪ |
১৪.৮৭ |
৯.২৯ |
৪.২৭ |
|
|
è গ্রামীনফোন ৪জি স্পীডে রবি ও বাংলালিংক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে
গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশান এর সুপারিশসমূহ:
ü এসব রিপোর্ট খুব সহজেই গ্রাহকে বিভ্রান্ত করে তাদের সেবা ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে।কাজেইএরূপ অবস্থা হতে গ্রাহকদের সুরক্ষা প্রদানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ü এই বিষয়ে আমি গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনা করে বিটিআরসি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়কে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
ü পাশাপাশি গ্রাহককে তার সেবা পছন্দে বিভ্রান্ত করে এমন কোন রিপোর্ট প্রকাশ থেকে বিরত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।বিটিআরসি কর্তৃক কোন রিপোর্ট এর যাচাই বাছাই ও অনুমোদন ছাড়া এরূপ রিপোর্টের প্রচার করা সমীচীন নয়।
ü বিটিআরসি কর্তৃক পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টকে আরো সার্বিকভাবে দেশব্যাপী একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিচালনা করে জনগণকে অবগত করার সুপারিশ করছি।