ভারতের উত্তর প্রদেশের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তার নয়া নাম হয়েছে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী। একেরপর এক ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য ও তৎপরতার কারণে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের উলামারা ফতোয়া দিয়ে আগেই তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করেছিলেন।
সোমবার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পর তিনি বলেন, আমাকে যখন ইসলাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তখন আমি কোন ধর্ম গ্রহণ করব সেটা আমার ইচ্ছা। তার দাই-সনাতন ধর্মই পৃথিবীর প্রথম ধর্ম, তাতে যতটা মঙ্গল পাওয়া যায়, অন্য কোনো ধর্মে নেই।
উত্তর প্রদেশে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র যোগি আদিত্যনাথ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ওয়াসিম রিজভি নিরন্তর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন।
ওয়াসিম রিজভি দেশের ৯টি মসজিদ হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে অবস্থিত মসজিদটিকে ভারতের মাটিতে কলঙ্ক হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।
মাদ্রাসার শিক্ষাকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করে মন্তব্য করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের ২৬টি আয়াত অপসারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসিম রিজভির বিরুদ্ধে অনেক ওয়াকফ সম্পত্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য জন্য সমস্ত এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
কয়েক মাস আগে তিনি পবিত্র কুরআনের ২৬টি আয়াত অপসারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন, যা আদালত প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছিল।
উত্তর প্রদেশের প্রখ্যাত শিয়া আলেম মাওলানা কালবে জাওয়াদের প্রভাবে, উত্তর প্রদেশের যোগি আদিত্যনাথ সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির অবৈধ দখলের তদন্ত সিবিসিআইডি’কে হস্তান্তর করে। বর্তমানে বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ‘সিবিআই’-এর হাতে রয়েছে। ওই ইস্যুতে ওয়াসিম রিজভিসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে রাজ্যের পাঁচটি জেলায় কারচুপির অভিযোগে মামলা রয়েছে। রাজ্যের শিয়া ওয়াকফ সম্পত্তি বেআইনিভাবে বিক্রি, কেনা এবং স্থানান্তরের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ‘সিবিআই’ ওই মামলা নথিভুক্ত করেছে। এভাবে বহু দুর্নীতি, আপত্তিকর মন্তব্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় ইত্যাদির পরে অবশেষে তিনি এবার ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং ওয়াসিম রিজভি থেকে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী হয়েছেন।
হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী ওয়াসিম রিজভির জন্ম শিয়া মুসলিম পরিবারে। তার বাবা রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। রিজভি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছিলেন, তখন তার বাবা মারা যান। ওয়াসিম রিজভি তার ভাইবোনদের মধ্যে বড় ছিলেন এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর তিনি সৌদি আরবে একটি হোটেলে চাকরি করতে যান এবং পরে জাপান ও আমেরিকাতে কাজ করেন।
ওয়াসিম রিজভি একসময়ে প্রখ্যাত শিয়া মাওলানা কালবে জাওয়াদের সংস্পর্শে আসেন এবং শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হন। রিজভি দু’টি বিয়ে করেছিলেন এবং উভয়ই বিয়েই লক্ষনৌতে হয়েছিল। রিভজির প্রথম স্ত্রী থেকে তিনটি সন্তান রয়েছে যার মধ্যে দু’টি কন্যা এবং একটি পুত্র রয়েছে। তিন সন্তানেরই বিয়ে হয়ে গেছে।
২০০৩ সালে উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির (সপা) মুলায়ম সিং যাদব যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, ওয়াকফ মন্ত্রী আজম খানের সুপারিশে, ‘সপা’ নেতা মুখতার আনিসকে শিয়া কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। কিন্তু আনিসের আমলে, লক্ষনৌয়ের হযরতগঞ্জে একটি ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন মাওলানা কালবে জাওয়াদ। মাওলানার কঠোর অবস্থানে বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় মুখতার আনিসকে। এরপরে ২০০৪ সালে মুলায়ম সিং যাদবের কাছে মাওলানা কালবে জাওয়াদের সুপারিশে, ওয়াসিম রিজভিকে শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।
হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পরে ওয়াসিম রিজভির দাবি- তিনি ইসলামকে ধর্ম বলে মনে করেন না। প্রতি জুমার নামাজের পর তার মাথা কেটে ফেলার ফতোয়া দেওয়া হয়, তাই এমন পরিস্থিতিতে কেউ তাকে মুসলিম বললে তিনি লজ্জিত হন।
কিছুদিন আগে তিনি তার অসিয়তনামায় লিখেছিলেন, তার মৃত্যুর পর তাকে যেন দাফন না করা হয়, হিন্দু রীতি অনুযায়ী দাহ করা উচিত। এবং ইয়েতি নরসিংহানন্দ যেন তার চিতায় আগুন দেয়।
এরআগে এক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, আমার একটাই অপরাধ আমি কোরআনের ২৬টি আয়াতকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। মুসলিমরা আমাকে হত্যা করতে চায় এবং ঘোষণা করেছে যে তারা আমাকে কোনো কবরস্থানে স্থান দেবে না।