আবু তাহের বাপ্পা : ওয়েলকাম বিল্ডার্সের নতুন প্রকল্প পরিচালক শরীফ মাদবর। নতুন কৌশল প্রকল্পে জমি দখল দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কাজে বাধা দিতে আসলে মেরে বস্তা বন্দী করবে বলে সবাইকে ভয় দেখান শরীফ মাতবর। শরীফ মাতবর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।তার ৩০ থেকে ৩৫টি মামলার রয়েছে। আর এই সুযোগেই হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
এলাকার সুত্রে জানা যায় শরীফ মাদার এর কয়েকটি মামলায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত হয়েও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৫৭ লক্ষ টাকা দামের বিলাস বহুল গাড়িতে ।
থেমে নেই এমএলএম প্রতারক ওয়েলকাম বিল্ডার্স লি: এর মহাপ্রতারনার ফাঁদ। প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে প্রতারনা করছেন ওয়েলকাম বিল্ডার্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেম। তিনি আগেও এমএলএম প্রতিষ্ঠানে প্রতারনা করে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন।
প্রতারক লায়ন আবুল কাসেমের নতুন ঠিকানা ওয়েলকাম বিল্ডার্স লি:। এবার নিজেই খুলে বসেছেন প্রতারনার জমজমাট হাঁট। মিরপুর এলাকার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তার প্রতারনার অন্যতম সহযোগী। তার সাথে যুক্ত রয়েছে প্রশাসনের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্য।
জাতীয় অর্থনীতি ইতোপূর্বে আবুল কাসেমের প্রতারনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রতারক আবুল কাসেম দুর্নীতিবাজ সদস্যদের মাঝে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢেলে দেয়। তারপর সব কিছু জায়েজ। প্রতারনা প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের নিকট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
লায়ন আবুল কাসেমের প্রতারনা আজ নতুন কিছু নয়।নতুন প্রতারনা প্রতিষ্ঠান খুলে ইতোমধ্যে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট কোন প্রকল্প না থাকলেও অলৌকিক ও ভুতুড়ে প্রকল্প দেখিয়ে গ্রাহকের সাথে প্রতারনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে ওয়েলকাম বিল্ডার্স লি: নামক এমএলএম প্রতিষ্ঠানটি মুলত ১ লাখ টাকার বিনিয়োগ করলে মাসে ১০,০০০/= টাকা করে ২০ মাস মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এমএলএম নামক প্রতিষ্ঠানগুলোর যত ধরনের প্রতারনার কৌশল রয়েছে সকল প্রতারনাকে হার মানিয়েছে মিরপুর ১১ নং বাসস্ট্যান্ডে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ের লিফট এর ৮ এ ওয়েলকাম বিল্ডার্স লিঃ নামক প্রতিষ্ঠানটি। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও গ্রাহককে প্রতারিত করার জন্য আরও একটি অফিস রয়েছে বাড়ী নং -০৫ রোড নং-০৪, ব্লক এ সেকশন -১১ পল্লবী মিরপুরে।
উক্ত বাড়ীর নীচ তলায় দরজায় কড়া নাড়লেই দেখা যাবে প্রতারনার হাঁট বসেছে। ওয়েলকাম বিল্ডার্স লিঃ ছাড়াও তাদের প্রসপেক্টাসে পাওয়া গেছে ওয়েলকাম এগ্রো এন্ড এগ্রিকালচার লি:-২০২৪, ওয়েলকাম টুরস এন্ড ট্রাভেলস -২০২৪। কোম্পানীর প্রসপেক্টাসে রয়েছে বিস্তারিত মিশন ও ভিশন।
ওয়েলকাম বিল্ডার্স এর কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কোম্পানীর লভ্যাংশ থেকে ৫% টাকা লিল্লাহ বোডিং, এতিমখানা, দারিদ্র ও বিনোদন খাতে ব্যয় করা। ওয়েলকাম সিটি ও ওয়েলকাম নুরজাহান গার্ডেন নামক দুটি বিল্ডিং এর ছবি দেওয়া রয়েছে প্রসপেক্টাসে। সেখানে ফ্লাট বিক্রির কথা বলা আছে।
আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, উক্ত বিল্ডিং দুটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুটি বিল্ডিং থেকে কিভাবে দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে তা জানতে চাইলে কোম্পানীর একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আপনি চাইলে আমাদের কোম্পানীতে শেয়ার কিনতে পারেন।
প্রতারনার কৌশল:
১ লাখ থেকে শুরু করে ১০ কোটি পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে। কোম্পানী প্রতিমাসে বিনিয়োগকৃত শেয়ার মুল্য থেকে লভ্যাংশ ৫% টাকা ও বাৎসরিক লভাংশ থেকে ৫% টাকা এবং বাৎসরিক এজিএম থেকে ২০% টাকা মুনাফা দেওয়া হবে। প্রতিমাসের ১ তারিখ থেক ১০ তারিখের মধ্যে টাকা প্রদান করা হবে।
মুনাফার পরিমান কেমন তা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন আপনি যত পরিমান টাকা বিনিয়োগ করবেন তার ৫% মুনাফা প্রতি লাখে ৫০০০ টাকা ও ৫% মুলধন ৫০০০ টাকা আসল মোট প্রতি লাখে ৫০০০+৫০০০=১০,০০০/- টাকা করে মোট ২০ মাসে পরিশোধ করবে কোম্পানি।
প্রসপেক্টাসের কথা ও বিক্রয় কমীর কথায় কোন মিল খুজে না পেয়ে জানতে চাওয়া হলো এ পর্যন্ত কি পরিমান টাকা বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছে। জবাবে উক্ত বিক্রয়কর্মী বলেন, তা তো শত কোটি টাকা হবে। কোথায় টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে জানতে চাইলে অস্বীকৃতি জানান উক্ত বিক্রয়কর্মী।
কেস স্টাডি:-১
প্রতারনার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে এ যাবৎকালের সকল প্রতারকদের হার মানিয়ে নেয়া কৌশল। গ্রাহকদের বলা হয় যে “আমাদের ব্যবস্থাপনার পরিচালক অত্যন্ত ক্ষমতাধর ১ জন ব্যক্তি। ঢাকা শহর ও তার আশেপাশে এমডি সাহেব ত্রুটিযুক্ত বেদখল সম্পত্তি ক্রয় করে থাকে।
এসব জমির মামলা-মোকাবেলা মিটিয়ে অতি উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। উক্ত জমি থেকে যা লাভ হয় তা থেকে আমরা মুনাফা দিয়ে থাকি।
সূত্র মতে জানা যায়, জমির মামলা মোকাবেলায় বছরের পর বছর ঘুরেও শেষ করা যায় না। তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান কিভাবে গ্রাহকদের নিকট থেকে বিনিয়োগ নিয়ে পরের মাস থেকেই মুনাফা সহ মূল টাকা ফেরৎ প্রদান করে থাকে? এই প্রশ্ন সাধারন বিনিয়োগকারীদের। যে প্রতিষ্ঠানের কোন নিজস্ব প্রকল্প নাই অথচ গ্রাহকদের নিকট থেকে শতশত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভুয়া কথা বলে। মূলত চটকদার কথা বলার জন্য একশ্রেনীর পেশাদার এমএলএম প্রতারনার কাজে পটু একদল ব্যক্তি ও সুন্দরী নারীদের কাজে লাগিয়েছে।
ওয়েলকাম বিল্ডার্সের নিজস্ব কোন জমি না থাকলেও মিরপুরের রূপনগরে ১২নং রোডের মাথায় অবৈধভাবে দখলকৃত একটি জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে একটি অফিস স্থাপন করে প্রতারনার ফাঁদ পেতেছে।
মূলত রূপনগরের ঐ জমিটি অবৈধভাবে দখলকৃত। সেখানে বস্তিসহ বিভিন্ন ধরনের ঘর ও সেমিপাঁকা ঘর রয়েছে। উক্ত জমির দখলদার শরিফ মাতবর এলাকার চিহ্নিত একজন ব্যক্তি। যার বিরুদ্ধে মিরপুরের বিভিন্ন থানায় প্রায় ৩৫টির মত গুরুতর অভিযোগে মামলা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। এই ব্যাপারে আমাদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধভাবে দখলকৃত ওয়েলকামের প্রকল্প জমিতে কোন ভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে না। অথচ উক্ত জমি দেখিয়ে ইতোমধ্যে কাশেম গং গ্রাহকের নিকট থেকে প্রতারনা মূলকভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওয়েলকাম বিল্ডার্স লি: এর জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানীর মেমোরান্ডাম অব আর্টিকেলস অনুয়ায়ী শরিফ মাতবর এর পরিচালক পদে কোন প্রকার নাম না থাকলেও উক্ত কোম্পানীর পরিচালক পদে বসে থেকে পেশী শক্তির ভয় দেখিয়ে প্রতারনামূলকভাবে কাশেমকে সহযোগিতা করছে।
আমাদের অনুসন্ধানী টিম মিরপুর এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে গুরুতর অনেক চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে। উক্ত তথ্যের মধ্যেই কাশেম, রানা, মিলন, শরিফ মাতবর এদের অতীত কর্মকান্ড পাওয়া গেছে। মূলত প্রতারনা করে গ্রাহকের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াই এদের মূল কাজ। অতি সম্প্রতি সারা দেশে সুপারশপে বিনিয়োগের নামে নতুন প্রতারনার ফাঁদ পেতেছে।
উক্ত প্রকল্পের বিষয়ে ওয়েলকাম বিল্ডার্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই কাজ করছি।
প্রশাসনের নাকের ডগার উপর কিভাবে দিনের পর দিন এ জাতীয় প্রতারনা করছে তা জানতে ডিএপি গোয়েন্দা শাখার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন বিষয়টি আমাদের নজরে আসে নাই। অথচ এই প্রতিবেদক যখন উক্ত প্রতিষ্ঠানে খোঁজ খবর নিতে গিয়েছে তার সামনেই দেখা গেছে পল্লবী থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের রুমে অবস্থান করছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তা হলে পুলিশের সহায়তায় কি প্রতারক প্রতিষ্ঠান জনগনের সাথে প্রতারনা করছে? মিরপুর জোনের ডিসি জসিম উদ্দিনকে জাতীয় অর্থনীতি অফিসিয়াল ফোন থেকে কল করে পাওয়া যায়নি।
ভুয়া ও প্রতারনামূলক কথা বলে যদি শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায় তাহলে আর ব্যবসায়ীরা কেন কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসায় ঝুকি নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বার বার এমএলএম প্রতারনার মাধ্যমে নিরীহ জনগণকে নিঃস্ব করছে আর প্রশাসন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এটা দেশের জন্য এক অশনী সংকেত। এদের আইনের আওতায় আনতে এখনই সরকারকে কঠোর হতে হবে।
ওয়েলকাম বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবী করেন আশুলিয়াতে তার কয়েক বিঘা জমির একটা প্রকল্প আছে। উক্ত জমি তিনি আমমোক্তার নামা নিয়েছে। একজন ব্যক্তির উক্ত জমি বেদখল হয়ে আছে। উক্ত জমি উদ্ধার করে তিনি গ্রাহদের টাকা ফেরৎ দিবেন। এই জাতীয় প্রতারনার কথা এখন পর্যন্ত কোন এমএলএম কোম্পানী আবিষ্কার করতে পারে নাই। অথচ আবুল কাসেমের প্রতারনার কাছে এ যাবৎ কালের সকল প্রতারকরা হার মেনেছে। উক্ত ব্যক্তি আবার একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেও নিজেকে দাবী করেন। তিনি বিশ্ব মানচিত্র নামক ১টি পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন।
আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়ী রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকায় তাকে কেউ চিনে না। এই কথা সে নিজেও স্বীকার করেছে। মিরপুর এলাকাতেই সে বড় হয়েছে। তার প্রতারনা প্রতিষ্ঠান দেখার জন্য রয়েছে একদল স্থানীয় পেশীশক্তি। পেশীশক্তি ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মহাপ্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক ভুক্তভোগী দাবী করেন।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থাকছে পরবর্তী পর্বে….।