রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর সবচেয়ে বড় রানওয়ে। রানওয়ের ৭০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। প্রায় ১৭০০ ফুট সমুদ্রপৃষ্ঠ ভরাট করে কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়েকে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
দেশে প্রথমবারের মত সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর নির্মিতব্য এ রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।চীনের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। শনিবার (২৮ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মো. মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ট ভরাট করে এ কাজটি করা হচ্ছে। এ বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশন হাব। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে যেন এখানে বিমান নামতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিমানবন্দরের আগের রানওয়ে ছিল ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট, সেখান থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়। এ কাজ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন যে এ বিমানবন্দরের রানওয়ে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১৭০০ ফুট ভরাট করে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের অনেক আধুনিক দেশ এটি করতে পারেনি। জাপান, চীন, কোরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এটি সম্ভব হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেল ভরাট করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি হয়ে গেলে ৭৭৭,৭৪৭ সহ আরও বড় পরিসরের বিমান দিন রাত এখানে অবতরণ করতে পারবে। রোববার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তের অনুষ্ঠানে রয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে প্রতিমন্ত্রী কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উদ্যোগ জানিয়ে মফিদুর রহমান বলেন, এ রানওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এ বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক এভিয়েশন হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। আন্তর্জাতিক টার্মিনাল হবে, বিদেশি পর্যটকেরা সরাসরি কক্সবাজার আসার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। এদিকে রানওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে পুরো কক্সবাজার শহরে। শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কে বিলবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারে ভরে গেছে। কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং আগ্রহে কক্সবাজারে এখন উন্নয়নের মহা জোয়ার চলছে। বর্তমানে ৬৯টি মহাউন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে এখানে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে এটি হবে যোগাযোগের আরেকটি নতুন দিগন্ত। এখানকার অর্থনীতি, পর্যটন সর্বোপরি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। সাগরবক্ষে বিস্তৃত হওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি পূর্ণ লোডে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা, সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ ক্যাট-১ লাইটিং সিস্টেম সংস্থাপনের ফলে রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা, বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।