দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর আবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধ আরোপ করছে বিভিন্ন দেশ। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও জাপান কোয়ারেন্টিন জোরদারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের জোটভুক্ত সব দেশেই দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের প্রস্তাব করেছে।
বিজ্ঞানীরা এখনো করোনার এ নতুন ধরন সম্পর্ক খুব বেশি জানতে পারেননি। তবে এটা খুবই উদ্বেগের বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা। করোনার এ ধরন কতটা সংক্রামক, তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, করোনার নতুন এ ধরনে যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, সেটি মূল করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন থেকে ভিন্ন। আর ওই স্পাইক প্রোটিনকে বিবেচনায় নিয়েই করোনার টিকাগুলো তৈরি করা হয়েছে। সে কারণে এসব টিকা করোনার নতুন ধরনটির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী গ্রান্ট শাপসকে উদ্ধৃত করে স্কাই নিউজ বলেছে, ‘বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত করোনার যতগুলো ধরন দেখেছেন, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।’
করোনার নতুন ধরন নিয়ে বৈঠকে বসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও বলেছে, বৈঠকের পর নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে। বিবিসি জানিয়েছে, বৈঠক চলাকালে ডব্লিউএইচওর একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংস্থাটি বর্তমানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে সতর্ক করছে এবং সরকারকে ঝুঁকিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্বেগ রয়েছে। তবে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনটি কারও শনাক্ত হয়নি।
বি.১.১.৫২৯ নামের করোনার এ ধরন বতসোয়ানা ও হংকংয়েও পাওয়া গেছে বলে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, মালাবিফেরত একজনের শরীরে করোনার এ ধরন শনাক্ত হওয়ার পরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তারা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তাঁর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আমরা জরুরি অবস্থার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। আমাদের মূল নীতি হলো দ্রুত, বলিষ্ঠভাবে ও এখনই পদক্ষেপ নেওয়া।’
করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে ইউরোপের দেশগুলোতে এ ভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ চলছে। এরই মধ্যে বিধিনিষেধ জোরদারের পাশাপাশি টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে ইউরোপের দেশগুলো। সেখানকার অনেক দেশেই দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যখন শীত নামছে, সে সময় করোনার চলমান ঢেউয়ের মধ্যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত ১৪ দিনে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলো ভ্রমণ করে আসা ব্যক্তিদের ওপর ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাইরাসের নতুন ধরনের এলাকা (ভাইরাস ভেরিয়েন্ট এরিয়া) ঘোষণা করছে জার্মানি।
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের পরীক্ষা ও নজরদারিতে রাখতে রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ভারত। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও আফ্রিকার ওই অঞ্চল থেকে লোকজন আসায় বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরও পাঁচটি আফ্রিকান দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে জাপান।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে এরই মধ্যে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছে ৫৪ লাখ মানুষ।