আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সারাবিশ্বেই এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করে রেখেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজ চলছে। করোনার বেশ কিছু সম্ভাব্য ভ্যাকসিন এর মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে।
অনেক ভ্যাকসিনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং শরীরে নিরাপদ অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে, করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণে কাজ করার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিনের ক্রেতা এই সংস্থাটি। প্রতিবছরই তারা প্রায় প্রায় ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিন কিনে থাকে এবং প্রায় একশ দেশে তা সরবরাহ করে থাকে। এবার একই প্রক্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিনও ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি গরিব দেশগুলোতে সমতার ভিত্তিতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছে ইউনিসেফ।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক টুইট বার্তায় বলেন, ভ্যাকসিন যখন পাওয়া যাবে, তখন সব দেশ যেন নিরাপদে, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে তা পেতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সব দেশের সরকার ও উৎপাদকসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যাতে সব দেশ টিকার প্রাথমিক ডোজগুলো পেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, টিকার জোট দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি), দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই), পিএএইচও, বিশ্বব্যাংক, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অন্য শরিকদের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে ইউনিসেফ কাজটি পরিচালনা করবে।
এর মধ্যেই বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে ইউনিসেফ। দরিদ্র দেশগুলো যেন সহজেই ভ্যাকসিন পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি।
এদিকে, আগামী জানুয়ারির মধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পাবে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির সকল নাগরিককে করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়া হবে। ভ্যাকসিন ক্রয়ে করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উৎপাদক অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং কুইন্সল্যান্ড-সিএসএল লিমিটিডের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে দেশটির সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার কিছু আশার খবর প্রয়োজন। মহামারি করোনার হাত থেকে অস্ট্রেলিয়ানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে আমরা আজ আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করলাম।’
মরিসন জানিয়েছেন, করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উৎপাদক দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হলে তা ক্রয়ে চুক্তি করেছে তার সরকার। এর একটি ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অপরটি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড এবং সিএসএল লিমিটেডের।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সোমবার সাংবাদিকদের জানান, আগামী জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরির ভ্যাকসিনটির ২৮ লাখ ডোজ সিএসএল সরবারহ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বর্তমানে ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার এই সম্ভাব্য ভ্যকসিনটির বৃহৎ পরিসরে ট্রায়াল চলছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেছেন, তারা যে দুটি ভ্যাকসিন ক্রয়ে চুক্তি করেছে সেসব ভ্যাকসিন তৈরির কাজে নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুটি ভ্যাকসিন নেয়া হলে তা মানুষকে কয়েক বছর মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
অপরদিকে, এর মধ্যেই তিন হাজার কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর স্বেচ্ছা ভিত্তিতে করোনা টিকা ‘করোনাভ্যাক’ প্রয়োগ করেছে চীন। সিনোভ্যাক এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। কোম্পানির মুখপাত্র লিউ পেইচেং জানান, বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের আগে চূড়ান্ত ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে করোনাভ্যাকের।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে পোলিও, হামের মতো বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউনিসেফ। তারা প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ভ্যাকসিন কিনে থাকে। এ কাজে যেসব দেশ সহযোগিতা করে যাচ্ছে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, এবার তারা সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের বিষয়ে বেশ আশাবাদী। প্রায় ১৭০ টি দেশে করোনার ভ্যাকসিন বিতরণ করবে সংস্থাটি।