1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির ‘কবর খুঁড়ে খুঁড়ে ক্লান্ত গোরখোদকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

মহামারী করোনায় গতকাল ১৬ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গেছেন ১০১ জন। প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের মৃত্যুকে ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। দেশে অধিকাংশ মানুষ মুসলমান হওয়ায় মৃতদের কবর দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিদিন সারি সারি কবর খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন রাজধানীর দুই সিটিসহ সারা দেশের গোরখোদকরা। জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির একের পর এক লাশ আসছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রায়েরবাজার কবরস্থানে। ফলে কবর খোঁড়ার পর বিশ্রাম পাচ্ছেন না এখানে দায়িত্বরত কবরখোদকরা। একদিকে কবর খুঁড়ছেন, অন্যদিকে লাশ দাফন হচ্ছে। রায়ের বাজার কবরস্থান ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য কবরস্থানগুলোতে প্রতিদিন অর্ধশতের ওপরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হচ্ছে। এর বাইরেও স্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েইে চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ঢাকায় যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের লাশ দাফন হচ্ছে দুই সিটির কবরস্থানগুলোতেই। এসব কবরস্থানে প্রতিনিয়ত আসছে লাশ। একের পর এক লাশ দেখে অবাক হচ্ছেন গোরখোদকরা। আগে কখনো এত লাশ একসঙ্গে দেখেননি তারা। আর এত কবরও খুঁড়তে হয়নি তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১০টি সরকারি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আজিমপুর কবরস্থান, জুরাইন কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, খিলগাঁও কবরস্থান, রায়েরবাজার কবরস্থান, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর ও ১২ নম্বর সেক্টরে রয়েছে দুটি কবরস্থান। এ ছাড়া ধলপুর কবরস্থান ও মুরাদপুর শিশু কবরস্থান নামে আরও দুটি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনার মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন হচ্ছে ডিএনসিসির রায়েরবাজার কবরস্থানে। মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কবর খুঁড়ছেন রায়েরবাজার কবরস্থানে। এ কবরস্থানের এক পাশে একাই কাজ করছেন তিনি। একদিকে মরদেহ দাফন হচ্ছে অপরদিকে কবর খুঁড়ে চলছেন তিনি। এভাবে একের পর এক কবর খোঁড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে এই কবরস্থানে কবর খুঁড়ছি। আগে কখনো একসঙ্গে এত লাশ দাফন করতে দেখিনি। একদিকে খুঁড়ে শেষ করছি, আরেক দিকে দেখছি লাশ দাফন হচ্ছে। আর এসব মৃত ব্যক্তি সবাই করোনা রোগী। তিনি বলেন, চারপাশে যত কবর রয়েছে এগুলো সব করোনা রোগীর। এখানে শুধু করোনা রোগীদের দাফন করা হচ্ছে। গত কদিনে পুরোটা ভরে গেছে। নতুন নতুন লাইনে কবর খুঁড়ছি আর করোনা রোগীর লাশ দাফন করা হচ্ছে।

রায়েরবাজার কবরস্থানে দেখা যায়, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত অংশে দাফন শেষ করে চলে যাচ্ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্স। মৃতদেহের সঙ্গে ছিলেন মাত্র দুজন মানুষ। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে সারি সারি অসংখ্য কবর খুঁড়ে রাখা রয়েছে। এর মধ্যে এক পাশ থেকে লাইন ধরে কয়েকটি কবর দেওয়া হয়েছে। শেষ লাইনের শুরু থেকে চারটি কবর ছিল একেবারেই নতুন। মাটি দেখেই বুঝা যাচ্ছিল একটু আগেই এখানে লাশ দাফন হয়েছে। মিজানুর জানালেন, এগুলো সবই আজকের কবর। আশপাশের নতুন কবরগুলো দেখিয়ে জানতে চাইলে মিজানুর বললেন, গতকালই ১০ জনের বেশি করোনা রোগীকে কবর দেওয়া হয়েছে। কখন যে কোনটা হচ্ছে দেখারও সুযোগ পাচ্ছি না। এদিকে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের পাশাপাশি অনেক অস্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির লাশও দাফন করা হচ্ছে দুই সিটির কবরস্থানগুলোতে। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কবরস্থানের জায়গা সংকটে পড়েছে দুই সিটি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে গোরস্থান না করায় রাজধানীতে কবর সংকট বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৬টি ইউনিয়ন। ওইসব এলাকাগুলোতে প্রায় ১৫ লাখ লোক বসবাস করে। কবরস্থানের সমস্যা সমাধানে ডিএসসিসির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন আট ইউনিয়নের প্রতি জোর দেওয়ার কথা বলছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, বনানী কবরস্থানে রয়েছে ২২ হাজার কবরের জায়গা। তাও অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। রায়েরবাজারে প্রায় ৮১ একর জায়গার ওপর কবরস্থান তৈরি করেছে সংস্থাটি। সেখানে প্রায় ৯০ হাজার কবর দেওয়ার জায়গা আছে। রাজধানীর সরকারি কবরস্থানগুলোতে অস্থায়ীভাবে দুই বছর পর পর যোগ হয় নতুন আরেকটি মৃত ব্যক্তির কবর। ডিএসসিসির সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ঢাকা শহরে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। এতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। আবার বর্তমানে করোনায় মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। তবুও আমরা বিশেষ করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, রায়েরবাজারে কবরস্থানের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত এলাকাতে আরও কয়েকটি কবরস্থানসহ শ্মশানঘাট করা হবে। তখন আর লাশ দাফনে কোনো ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হবে না।

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি