1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ হওয়ায়, বাড়ছে সিমেন্টের দাম

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্ট। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে সিমেন্ট তৈরির প্রধান উপকরণ ক্লিংকারসহ অন্যান্য কাঁচামাল, ফুয়েল ও কয়লার দাম।
একই সঙ্গে জাহাজ সংকটে বেড়েছে ভাড়া। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে সিমেন্টের। যার প্রভাব পড়েছে দেশের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বাজারে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রতিবস্তা সিমেন্টের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এ খাতের সবগুলো কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। বৈশ্বিক বাজারে এ কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল হলো ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। মূলত সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত ক্লিংকারের দাম আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের দামের ওপর। ক্লিংকারের দাম কয়েক দফায় গত এক মাসে ৯ ডলার বা ৭৬৫ টাকা বেড়েছে প্রতি টনে। এতে বস্তাপ্রতি ক্লিংকারের খরচ বেড়েছে ৩৮ টাকার ওপরে।
এছাড়া জাহাজ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে ৬০ থেকে ৭০ টাকা উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রতি বস্তায়। ফলে সিমেন্টের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় নেই। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকার প্রস্তুতে ব্যবহৃত জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্লিংকারের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আর চীন হঠাৎ করে কয়লার আমদানি বাড়ানোর ফলে দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এফওবিতে বা উৎপাদন পর্যায়ে যেখানে প্রতি টন কয়লার মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৪২ ডলার, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮২ ডলারে। এসব কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের অন্যতম মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েই চলেছে, যার প্রভাব দেশীয় সিমেন্ট খাতেও পড়ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) এর প্রেসিডেন্ট মো. আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে পুরোদমে অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া এশিয়া অঞ্চলে নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু করোনার সময়ে নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদনের মূল কাঁচামাল উৎপাদন তেমন হয়নি। যার ফলে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে একটি বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো দেশ প্রয়োজনীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বেশি দামে নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামাল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদিত নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন দেশে প্রস্তুত সিমেন্টের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে দ্বৈত কর সমন্বয় করা উচিত।

এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে নির্ধারিত শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি। নির্মাণ খাতের অন্যতম উপকরণটির কারণে যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য করভার কমানোর অনুরোধও জানান। একই সঙ্গে দাম সহনীয় রেখে যদি বিক্রি বাড়ে, তাহলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিমেন্ট সেক্টর, বসুন্ধরা গ্রুপ) খন্দকার কিংশুক হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কোনো পণ্য দেশে তৈরি হয় না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে এর কিছু প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের দাম প্রতিটনে ৯ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ ডলারে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জাহাজ ভাড়া। আগের তুলনায় জাহাজ ভাড়াও অনেক বেড়েছে। এজন্য প্রতিব্যাগ সিমেন্টের দাম উৎপাদন খরচের সঙ্গে ৫০ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। আগে আমরা প্রতিব্যাগ সিমেন্ট বিক্রি করেছি ৪০০ টাকায় এখন সেটা ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা শুধু একা নই, বিভিন্ন কোম্পানি পর্যায়ক্রমে ১০ থেকে ২০ টাকা করে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করছে। আমরা মাত্র আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে কী হবে সেটা পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ক্রাউন সিমেন্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) সারোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মেট্রিকটন ক্লিংকারের দাম ৪৬ ডলার থেকে ৫৫ ডলার হয়েছে। অন্যান্য কাঁচামালের মধ্যে লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম এগুলোর দাম প্রতি মেট্রিকটনে ৩ থেকে ৪ ডলার করে বেড়েছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তার একটা প্রভাবতো আমাদের বাজারে পড়বে। এজন্য আমরা উৎপাদন খরচের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের কথা বলেছি।

রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম উপাদান হলো সিমেন্ট। গত কয়েক মাস ধরে এই পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে, পণ্য পরিবহনের চাপে জাহাজভাড়া গত নভেম্বর থেকেই উর্ধ্বমুখী। গত কয়েক মাসে জাহাজ ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, বেড়েছে ফুয়েল, গ্যাসের দাম, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ফলে সকল ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ডেভলপার কোম্পানিগুলো অনেক লোকসানে পড়ছে। শুধু আমরা না, সরকারেরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমাদের একটা দাবি ছিলো, করোনা ভাইরাসের মহামারির এ সময়ে সরকারের উচিৎ হবে এ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে আপাতত দাম সমন্বয় করা।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, এর মধ্যেই সিমেন্টের দাম বস্তা প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট। নতুন বাজার এলাকার একটি দোকানের ম্যানেজার জানান, প্রত্যেকটি সিমেন্ট কোম্পানি থেকে বলা হচ্ছে, সামনে দাম আরও বাড়বে। রাজধানীর হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুরসহ বিভন্ন এলাকায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে সিমেন্ট বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির তথ্যানুসারে, ২টি কারখানা ক্লিংকার উৎপাদন করলেও বাকি ৩২টি কারখানা ক্লিংকারসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করেই সিমেন্ট প্রস্তুত করে। শুধু ক্লিংকারের দামই নয়, দাম বেড়েছে জ্বালানি তেলেরও। এছাড়া সিমেন্টের ব্যাগের দামও বেড়েছে আগের তুলনায়। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি গ্যাসের দামও। এদিকে শুধু কাঁচামালের দামই নয় খরচ বেড়েছে পরিবহন ব্যবস্থারও। এ ছাড়া বাংলাদেশের বন্দরের চিরায়ত সমস্যাতো রয়েছেই। বন্দরের অনিয়ম ও পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কোম্পানিগুলোকে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

জানা গেছে, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান উপকরণের মধ্যে আছে সিমেন্ট, রড, পাথর ও ইট। এসব নির্মাণ উপকরণের সামনে চাহিদা বাড়বে। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ বঙ্গের ২১টি জেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। এই ২১টি জেলায় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক ভবনের মতো অবকাঠামো তৈরি হবে। ঢাকার ছোট-বড় শিল্পকারখানা স্থানান্তর হবে। নতুন কারখানা হবে। আবার কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে অবকাঠামো উন্নয়নে গতি বাড়বে। এতে অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে। এই উপকরণের দাম যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হবে। ইতিমধ্যে রডের দাম বাড়ায় দেশে জরুরি ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির হিসাবে, বর্তমানে দেশে ৩৭টি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। গত ৬ বছরে সিমেন্ট বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৫ সালের তুলনায় সে বছর ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সিমেন্ট বিক্রি বেড়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। সে বছর দেশে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়। অর্থাৎ ১ বছরে বাড়তি ৪৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়েছিল। ২০২০ সাল বাদ দিলে বছরে গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে।

সস্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। তারা জানান, বিশ্ববাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের দাম দুইভাবে বাড়ছে। ক্লিংকার তৈরির খরচ বাড়ায় রপ্তানিকারক পর্যায়ে যেমন দাম বাড়ছে, তেমনি জাহাজভাড়া বাড়ায় তা আমদানি মূল্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। সব মিলিয়ে টনপ্রতি ক্লিংকারের দাম এখন ৫৫ থেকে ৫৬ ডলার। ফেব্রুয়ারির শুরুতেও প্রতিটনে ৪ ডলার বেড়ে ক্লিংকারের দাম ৪৬ ডলারে ওঠে। সিমেন্টশিল্পে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। সবকটি আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই হলো ক্লিংকার। গত অর্থবছরও দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ টন ক্লিংকার আমদানি হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি