ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে হেফাজতে নিবারণ আইনে মামলার আবেদন করেছেন। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে তিনি মামলাটি করেন।
মামলার আরজিতে বাদী বলেন, “গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় বাসার কলিং বেলে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজন লোক আমাকে বলে, ‘দরজা খোলেন না কেন?’ এরপর বলেন, ‘পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে নেন এবং সঙ্গে একটা ভালো শার্ট পরেন।’ তখন আমি তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে, তারা আমাকে পরিচয় দেয় নাই। তাদের আলাপ-আলোচনায় তাদের একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো রকম গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারে নাই। আমার বাসা থেকে আমার মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও পোর্টেবল যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়। আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ছয়-সাতটি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু তারা গাড়িতে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে গান বাজনা বাজাচ্ছিল। হয়তো আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে পুরানো একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির রুমে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন আমাকে দেখানো হচ্ছিল। সেগুলোর মর্মার্থ আমার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে বলে, ‘কেন এগুলো আঁকছস?’ কার্টুনের চরিত্রগুলো বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার পায়ের হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।”
গত বছরের ৫ মে র্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।