1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

কিশোরগঞ্জে প্রবাহমান নদীগুলো কি প্রকৃত মৎস্যজীবীদের দখলে আছে?

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

মো. আল আমিন, জেলা প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের প্রবাহমান বেশ কয়েকটি নদীর মধ্যে অন্যতম একটি নদীর নাম ঘোড়াউত্রা। ৩৩ কিলোমিটার (২১ মাইল) দৈর্ঘ্যের এই নদীটির উৎপত্তি হয়েছে জেলার মিঠামইন উপজেলার ধনু নদী থেকে। উৎপত্তির পর দক্ষিণমুখো হয়ে এই জেলারই বাজিতপুর উপজেলায় মেঘনা ও কালনীর সঙ্গমে মিলিত হয়েছে। মিঠামইন থেকে বেরিয়ে এটি নিকলী উপজেলা শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই নদীর বাজিতপুর অংশের তীরে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধা তার চোখের জল ফেলে আক্ষেপ করে বলে ‘নদী তুমি কার’?

এই নদীই কেড়ে নিয়েছে তার বাপদাদার বসত ভিটের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু। এমনকি পিতৃমহের সমাধিস্থলও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান এই বৃদ্ধা। পাশ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার দূরের ‘গুরই’ নামক গ্রাম থেকে নিজ জন্মস্থান দেখতে আসা বৃদ্ধাকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এমন আক্ষেপের কারন জিজ্ঞেস করলে তার তথ্যমতে ছাতিরচর এলাকার উত্তর দিকের ঘোড়াউত্রা নদীর তীর সংলগ্ন স্থানে ছিলো তার পৈতৃক বসত ভিটে।
নদী ভাঙ্গনে কয়েক যুগ আগেই হারিয়ে গেছে তার শৈশবের স্মৃতিময় বসতভিটেটি। বাধ্য হয়েই জন্মস্থানের মায়া ছেড়ে পাশের ইউনিয়নের অন্য গ্রামে বসত করলেও মনটা পরে থাকে নিজ জন্মস্থানের দিকে। নিরবে নিভৃতে চোখের জল ফেলা ছাড়া উপায় নেই তার।
নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই কাঁদো কাঁদো স্বরে স্মৃতিচারণ করতে শুরু করেন তিনি।
বলতে থাকেন হারানো দিনের গল্প। এক পর্যায়ে জানা গেলো ৬০ ঊর্ধ্বে লাজুক এই নারীর নাম রওশন আরা। স্বামী নসু মিয়াও বহু বছর আগে পরপারে চলে গেছে। এই গ্রামেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিলো। অন্য গ্রামে বসবাস করলেও নিজ গ্রামের মায়ায় আবারো জন্মস্থানে ফিরে এসে বন্ধকী বাড়ি রেখে স্থায়ীভাবে বসবাস করার চেষ্টা চলমান বলে তিনি জানান।

আক্ষেপের সুরে নসু মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিন বলে নদী নিকু আইনে বসতভিটা হারিয়ে নদী গর্ভে বিলীনরাই চর পাওয়ার কথা। অথচ সরেজমিনে দেখা যায় তার বিপরীত দৃশ্য। হাওর অঞ্চলের ঐ এলাকায় চলে দলীয় প্রভাব। এছাড়াও এখানে চলে জোর আছে যার নদীর চর যেনো ঠিক অনেকটাই তার! পানি শুকিয়ে যেতে না যেতেই দখল দ্বন্দ্ব প্রতিবছরই প্রকাশ্যে আসে।

স্থানীয় জেলে শহীদ মিয়া বলেন, শুনেছিলাম আইনে আছে ‘জাল যার জল তার’ এখন দেখি হাওর অঞ্চলে সেই কথার কোনো মিল নেই। মৎস্যজীবী সমিতির নামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নদী দখল করছে আর সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত জেলেরা।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও বদলায়নি গরীব মানুষের ভাগ্যের চাকা। উন্মুক্ত হয়নি প্রবাহমান নদীগুলো। দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমেই হাত বদল হচ্ছে নদীগুলো। হাওরে মৎস্য আহরণের মৌসুমে মাছ ধরার সুযোগ মিলে না প্রকৃত জেলেদের। এমনি দৃশ্যের দেখা মিলে সরেজমিনে ঘোড়াউত্রা নদী তীরে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে।

অভিযোগ রয়েছে প্রবাহমান নদীগুলো লিজের নিয়ম না থাকলেও নদীর আশেপাশের বিল বা নালা লিজ নিয়েই একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল সাজানো মৎস্যজীবী সমিতির নামে ভোগদখল করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সাজানো মৎস্যজীবী সমিতির নামে ভোগ দখলে আছে নদীগুলোর। ফলে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত জেলেরা। জেলেরা আফসোস করে বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা যাদের বেশি থাকে তাদের দখলেই থাকে নদী।

স্থানীয় কৃষকদের বলতে শোনা গেছে, অনেক মানুষের বাপদাদার কৃষি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। ভূমিহীনেরা নয় বরং স্থানীয় প্রভাবশালীরাই আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে বালু ও মাটি। । ক্ষমতাশীলদের বিরুদ্ধে আইনের চোখও যেনো অনেকটা অন্ধ। ক্ষমতাসীনরা প্রবাহমান নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকেও বালু উত্তোলন করে। ফলশ্রুতিতে নদীর রূপরেখারও অনেক ক্ষেত্রে ঘটে নানা পরিবর্তন। ভেঙ্গে নিয়ে যায় আশপাশের আবাদী জমিসহ বসতভিটা।
এমন দৃশ্য দেখে মানুষজনকে বলতে শুনা যায়, নদীর মালিক প্রকৃতপক্ষে সরকার হলেও বালু, মাছ আর চর যেনো যুগ যুগ ধরেই ক্ষমতাসীনদের দখলে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি